আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ২৩৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ঘোষিত তালিকায় নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম। অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকেও একই আসনে প্রতীন্দ্বন্ধীতা করবেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ। ফলে হাতিয়ার রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে এক নতুন আলোচনা। ধানের শীষ বনাম শাপলা কলি প্রতীক।
সম্প্রতি রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন ছিল হাতিয়া আসনটি বিএনপির পরিবর্তে জোটবদ্ধ হলে জোটের শরিক জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদকে দেওয়া হতে পারে। তবে ঘোষিত তালিকায় ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মাহবুবুর রহমান শামীমের নাম আসায় এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
মনোনয়ন ঘোষণার পরপরই হাতিয়ার প্রায় সব ইউনিয়নে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বাস, মিষ্টি বিতরণ ও পথসভা করেন। তারা বলেন, দীর্ঘ ১৭ বছর পর হাতিয়ায় বিএনপির শীর্ষ নেতার হাতে ধানের শীষের প্রতীক ফিরে আসায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃৃষ্টি হয়েছে।
হাতিয়া উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব ফাহিম উদ্দিন বলেন, ধানের শীষ মানে মানুষের ভোটাধিকার। শামীম ভাই মাঠে থেকেছেন, আন্দোলনে থেকেছেন, এখন সময় এসেছে জনগণকে সেই লড়াইয়ে ফেরানোর। আমরা দলের মধ্যে সকল ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করবো।
উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক রিয়াজ মাহমুদ বলেন, হাতিয়ার তরুণ ভোটাররা পরিবর্তন চায়। শামীম ভাই তরুণদের অনুপ্রেরণা। তরুন প্রজন্মের মতামতের প্রতি গুরুত্ব দিয়ে এবং দ্বীপবাসীর স্বপ্নের আধুনিক হাতিয়া বিনির্মানে সবাইকে নিয়ে কাজ করার অঙ্গিকার করেছেন ধানের শীষের কান্ডারি মাহবুবুর রহমান শামীম।
হাতিয়া উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক মো. আদনান বলেন, শামীম ভাইয়ের স্বপ্ন- হাতিয়ার নদীভাঙন রোধ, শিক্ষা বিস্তার ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। এবার ধানের শীষে ভোট দিয়ে অধিকার ফিরে পাওয়ার সুযোগ পেয়েছে হাতিয়ার মানুষ।
অন্যদিকে, এনসিপির প্রার্থী আবদুল হান্নান মাসউদের সমর্থকরা বলছেন, হাতিয়ার মানুষ যুগের পর যুগ অবহেলিত, বঞ্চিত রয়েছেন। এখানে যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও কর্মস্থানের করুন দশা। তাদের নেতা হান্নান মাসউদ দীর্ঘদিন ধরে হাতিয়ায় নদীভাঙন রোধ আন্দোলন, অসহায়দের সহায়তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবদান ও মাঠ পর্যায়ে গণসংযোগে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। হাতিয়ার জনগন এবার পরিবর্তন চায়। তারা শাপলা কলিতে আস্থা ফিরিয়ে এনেছেন।
এনসিপি’র হাতিয়া উপজেলার প্রধান সমন্বয়ক শামসুল তিব্রিজ বলেন, হান্নান ভাই মানুষের মাঝে আছেন, ঘরে ঘরে আছেন। তিনি নদী ভাঙনের সময় নৌকা নিয়ে মানুষের পাশে ছিলেন, নদী ভাঙনরোধে হাতিয়ার ২৮টি স্থানে ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গনরোধের ব্যবস্থা করেছেন, ভূমিহীনদের বন্দোবস্থ নথির ব্যবস্থা করে ভূমির মালিকানা প্রদান করেছেন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়নে কাজ করছেন, নদীতে যাতায়াত ভাড়া নিয়ন্ত্রণ করেছেন। বর্তমানে হাতিয়াবাসী হান্নান মাসউদের কর্মকান্ডের সুফল পেতে শুরু করেছেন। তাই এখন ভোটেও মানুষ তার পাশে থাকবে।
এনসিপি সমন্বয়ক ইউসূফ বলেন, আমরা নতুন দল, কিন্তু মাঠে পুরনো। মানুষের ভালোবাসাই আমাদের শক্তি। এনসিপি হাতিয়ায় এখন গণআন্দোলনের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। এনসিপির কারণেই মাঠে নির্বাচনী উত্তাপ শুরু হয়েছে। আমরা আশা করছি হাতিয়ার মানুষ তাদের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য হান্নান মাসউদের হাতেই তাদের জিম্মাধারী তুলে দিবেন।
অন্য আরেক সমর্থক ফিরোজ আলম বলেন, হাতিয়ার মানুষ এখন পরিবর্তনের রাজনীতি চায়। হান্নান মাসউদ ভাই সেই পরিবর্তনের মুখ। তিনি ত্যাগী, নিষ্ঠাবান, জনগণের মানুষ।
জুলাই আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা মো. কামরুজ্জামান বলেন, বিএনপি মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় কোনো চমক আনতে পারেনি। বরং সাবেক এমপিদের প্রাধান্যই দিয়েছে। অনেক বহিষ্কৃত ও বিতর্কিত ব্যক্তিও তালিকায় রয়েছেন। তরুণ প্রার্থীদের প্রতিনিধিত্ব হতাশাজনক।
এবিষয়ে নোয়াখালী-৬ আসনের মনোনীত প্রার্থী মাহবুবুর রহমান শামীম বলেন, বিএনপি জোটের শরিকদের জন্য কিছু আসন রেখে ২৩৭ আসনের তালিকা প্রকাশ করেছে। মানুষ ধানের শীষে ভোট দিতে মুখিয়ে আছে। ১৭ বছর পর ধানের শীষের জয় হবেই। আমরা উন্নত হাতিয়ার গড়তে কাজ চালিয়ে যাব।
একই বিষয়ে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদ বলেন, আমি সবসময় অসহায় মানুষের পাশে ছিলাম, আছি, থাকবো ইনশাআল্লাহ। হাতিয়ার নদীভাঙন রোধে আমি প্রাণপণ লড়ছি, এই লড়াই চলবে। আমার শক্তি জনগণ, তাদের রায়কেই আমি শ্রদ্ধা করবো।