

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর ১০ কিলোমিটার মহাসড়কের বাংলা বাজার এলাকায় সড়ক বিভাগ ও নোয়াখালী খাল দখল করে গড়ে ওঠেছে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা। এতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। জনস্বার্থে সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে নির্মিত এসব স্থাপনা উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সরেজমিন বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাংলা বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর সড়কের পাশের সড়ক বিভাগের খালি জায়গা ও নোয়াখালী খাল দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং দোকান ভিটি বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন প্রভাবশালী একটি চক্র। স্থানীয়দের অভিযোগ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের ম্যানেজ করেই চলছে এসব দখল উৎসব।
সরকারি জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণের ছবি ও ভিডিও ধারণ করতে গেলে সংবাদকর্মীর কাজে বাঁধসাজে স্থানীয় মেসার্স সফি উল্যা ট্রেডাস্রে মালিক সফি উল্যা। তিনি উত্তেজিত হয়ে তেড়ে যান সংবাদকর্মীদের দিকে। এসময় ওই ব্যক্তি বলতে থাকেন, কিসের ছবি তোলেন, কেন তোলেন। সব দিক ম্যানেজ করে দোকানঘর নির্মাণ করেছি। আপনারা প্রেসক্লাব সভাপতির সাথে কথা বলুন, এই বলে পলাশ নামে স্থানীয় এক বুয়া সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে বলেন তিনি। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে চাঁদাবাজির মামলায় পড়তে হবে! আমার এক বেয়াইও কিন্ত বড় সাংবাদিক!
স্থানীয়রা বলেন, ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে জেলার বৃহৎ খালের অংশ হিসেবে জলাবদ্ধতাদূরীকরণ ও কৃষি জমিকে সেচ সুবিধা নিশ্চিত, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও অধিক ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে নোয়াখালী খালের বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা থেকে লক্ষ্মীপুরের চন্দ্রগঞ্জ বাজার পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার খাল পুনঃখনন প্রকল্পের কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ২০২৩ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ হতে না হতেই স্থানীয় হুন্ডি ব্যবসায়ী মুন্সি প্রভাব খাটিয়ে সফি উল্যা, তার ছেলে খোকন, সাহাব উদ্দিন, ঢাকার ব্যবসায়ী মঞ্জু, কাদেরসহ শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তি বিভিন্ন সময়ে সড়ক বিভাগ ও নোয়াখালী খালের বেশিরভাগ অংশ দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করেছে। কিছু ব্যক্তি পানি উন্নয়ন বোর্ডের একসনা বন্দোবস্তের নামে প্রভাব খাটিয়ে জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে ওই স্থাপনা অন্য ব্যক্তির নিকট দখল বিক্রি করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনবান্ধব কর্মসূচির বাস্তবায়নেও নোয়াখালী খালের ওপর অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের কারণে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়ে এলাকার কৃষি জমি ও বাড়ি ঘরে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় বাংলা বাজার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হাসানুজ্জামান হাসান বলেন, অবৈধ দখলদাররা সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে সরকারি জায়গা দলখ করে স্থাপনা নির্মাণ করছে। তাদের কোন বন্দোবস্তই নাই। তারা আমার কাছে আসছে অনুমতির জন্য, আমি বাজার কমিটির সভাপতি হলেও সরকারি জায়গায় কিভাবে ঘর তোলার অনুমতি দিব? তারা কারো কথায় মানেনা, সকল দপ্তর নাকি তাদের পকেটে থাকে। সরকারি জায়গা থেকে সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে জনস্বার্থ রক্ষার দাবি জানান এই ব্যক্তি।
স্থানীয় গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন মিন্টু বলেন, বাংলা বাজার এলাকার দোকানঘরগুলোর অনেক দাম হওয়ায় একে-অপরের থেকে দখল নিয়ে স্থাপনা গড়ে তুলছেন। দখলদাররা বলেছেন, তারা পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে একসনা বন্দোবস্ত নিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। তাই আমরা প্রশাসনকে বলেও কোন লাভ হয়না। কাজ চলমান অবস্থায় প্রশাসনকে বললে পুলিশ এসে ঘুরে যায়। কিন্তু পরক্ষণে ঠিকই স্থাপনা ওঠে যায়। এটা সারা বাংলাদেশের চিত্র। আমরা আইন-শৃঙ্খলা মিটিংয়ে বলেও কোন কাজ হয়নি।
এদিকে, নোয়াখালী সড়ক বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন শীঘ্রই ওইসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে তারা যৌথভাবে অভিযান পরিচালনা করবেন।
বেগমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইয়াসির আরাফাত বলেন, নতুন করে কেউ কোন স্থাপনা নির্মাণ করছেন এ ধরনের অভিযোগ পায়নি। তার পরও সড়ক ও খালের জায়গা দখলকারীদের বিরুদ্ধে জনস্বার্থে অভিযান পরিচালনা করে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে।