নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার নদনা বাজার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে
কেন্দ্র করে দুই গ্রামের কিশোর গ্যাং ও সন্ত্রাসীদের মধ্যে দফায় দফায়
সংঘর্ষ, অগ্নিকাণ্ড, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।
সোমবার (৮ ডিসেম্বর) রাতে উপজেলার নদনা বাজারে চলা এই সহিংসতায়
১৫/১৬টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। সংঘর্ষের সময় একটি মোটরসাইকেল ও একটি
ভ্যান গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতেও হামলা চালানো হয়।
খবর
পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। পরে সেনা
সদস্যরা পৌঁছলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে উভয়পক্ষের মধ্যে এখনো উত্তেজনা
বিরাজ করছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, নদনা
বাজারের উত্তরে (উত্তর শাকতলা) এবং দক্ষিণে (দক্ষিণ শাকতলা) গ্রাম
অবস্থিত।দুই গ্রামের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কিশোর-তরুণ মাদকসহ কিশোর গ্যাং
তৈরি করে বিভিন্ন অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং বাজার নিয়ন্ত্রণকে
কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। গত সোমবার সন্ধ্যায়
সেই উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে। প্রথমে উভয়পক্ষ পাল্টাপাল্টি ধাওয়া এবং
পরে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় বাজারে ইটপাটকেল ছোড়া ও প্রতিপক্ষের দোকানে
হামলার ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা
যায়, দুদিনের সংঘর্ষে উভয়পক্ষের সাত-আটজন আহত হয়েছেন। তাদের অনেকে আগে
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন, বর্তমানে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত
হলেও স্থানীয়দের দাবি সংঘর্ষ রাজনৈতিক নয়, কিশোর-তরুণেরা কারো কথা শোনে না
এবং আধিপত্য দেখাতেই এ ধরনের সহিংসতায় জড়াচ্ছে।
বাসিন্দাদের
অভিযোগ, সংঘর্ষের সময় পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও ‘অসহায়ের মতো
দাঁড়িয়ে থাকতে’ দেখা গেছে।মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আবারও দুই পক্ষ বাজারে
মুখোমুখি হলে নতুন করে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। ইটপাটকেল নিক্ষেপে পুরো
বাজার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।এ সময় আরো কয়েকটি দোকান লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া
গেছে। রাত নয়টার দিকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
টানা দুই দিনের সংঘর্ষে বাজারের তিন শতাধিক দোকানের ব্যবসা প্রায় অচল হয়ে
পড়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, আমরা
প্রথমে ভেবেছি ছোটখাটো ঝামেলা। কিন্তু মিনিট দশেকের মধ্যে
ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল সব মিলিয়ে বাজারটা এক মুহূর্তে রণক্ষেত্র হয়ে
যায়। এমন পরিস্থিতি নোয়াখালীতে খুব কমই দেখা যায়। ভয় পেয়ে অনেকেই দোকান-ঘর
ছেড়ে দৌড়াতে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা শামসুল আলম বলেন, সন্ধ্যার পর
বাজারে বের হওয়ার সাহস পাই না এখন। দুই গ্রামের এই ঠেলাঠেলি আর আধিপত্য
দেখানোতে সাধারণ মানুষের জীবন ও ব্যবসা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি আরো আগে কঠোর হতো, এত বড় ক্ষতি আর হতো না।
নদনা
ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, একদল উঠতি বয়সের তরুণ নদনা
বাজারে আধিপত্য নিয়ে সব সময় সমস্যা করে। কারো কথা শোনে না। সামান্য বিরোধ
হলেই মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে। আমাদের লোকজন থামাতে গেলে উল্টো ইটের আঘাতে আহত
হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি।
সোনাইমুড়ী
থানার ওসি কবির হোসেন বলেন, ঘটনার মূল কারণ বাজারকেন্দ্রিক আধিপত্য
বিস্তার, এটি রাজনৈতিক কোনো ইস্যু নয়। দুষ্কৃতকারীরা মোটরসাইকেল ও
ভ্যানগাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে, একাধিক দোকান ভাঙচুর করেছে এবং ফায়ার
সার্ভিসের গাড়িতে হামলা করেছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে পুলিশ কঠোরভাবে
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।