চলতি বছরের জুনে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের (সিক্যাফ) এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে দেশে মোট অপরাধের ১১.৮৫ শতাংশ এখন সাইবার অপরাধ। সাইবার অপরাধে আক্রান্তদের মধ্যে ৫৯ শতাংশই নারী। মোট সাইবার অপরাধের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২১.৬৫ শতাংশই হ্যাকিং সংক্রান্ত। ভুক্তভোগীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনে অ্যাকাউন্ট হ্যাকিংয়ের কারণে নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের জেলা নোয়াখালীতেও এই সাইবার অপরাধ প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই অপরাধ দমনে জেলায় প্রশংসা কুড়িয়েছে বেসরকারি সেচ্চাসেবী সংগঠন ‘সাইবার ওয়ারিয়র্স’ নামের একটি সংগঠন।
সংগঠনটি নানামূখী সামাজিক কর্মকান্ডের পাশাপাশি ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত “নোয়াখালী সাইবার ওয়ারিয়র্স”এর অফিসিয়াল গ্রুপে এবং পেইজে আসা ১২৭৫ সাইবার অভিযোগের মধ্যে ১১৯৫ অভিযোগ সমাধান করেছেন বলে দাবি করা হয়েছে। যার মধ্যে সবছে বেশি সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন নারী শিক্ষার্থীরা। গেল ৩ বছরে অনলাইনের প্রতারক চক্র থেকে ১২ জন নারী উদ্যোক্তার টাকা উদ্ধার করে দেয় সংগঠনটি।
নোয়াখালী সরকারি কলেজের ইংরেজি বিভাগের স্নাতক প্রথম বর্ষের ছাত্রী সুমাইয়া আক্তার (ছদ্ধ নাম)। চলতি বছরের নভেম্বরের শুরুর দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শিকার হন হেস্থার। এ.আই প্রযুক্তির মাধ্যমে তার ছবি দিয়ে ফেসবুকে ফ্যাক একাউন্ট তৈরি করেন অপরিচত কেউ। সেই ছবিতে মূখের অবয়ব তার থাকলেও বাকি অংশ জুড়ে বসানো হয় অন্য কারও ছবি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এইসব ছবি দেখে থানা-পুলিশের কাছে ছুটাছুটি করে কোন কুলকিনারা না পেয়ে “নোয়াখালী সাইবার ওয়ারিয়র্স”এর দারস্থ হয় তার পরিবার। তাদের সহযোগিতায় ফেসবুক থেকে ফ্যাক একাউন্টটি ও ছড়িয়ে পড়া সকল ছবি মুছে ফেলা সম্ভব হয়।
ওই নারী শিক্ষার্থীর মতো বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অনলাইনে অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং, হারিয়ে যাওয়া মোবাইল উদ্ধারে সহযোগিতা, অনলাইন প্রতারণার শিকার উদ্যোক্তাদের টাকা উদ্ধার, হ্যাক হয়ে যাওয়া ফেসবুক পুনরুদ্ধার করে দিচ্ছে সংগঠনের একঝাঁক তরুণ-তরুণী।
“নোয়াখালী সাইবার ওয়ারিয়র্স”এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. সাইদুর রহমান বলেন, যেকোনো সাইবার অপরাধ প্রতিরোধে মানুষকে সচেতন না করলে সমাধান মিলবে না। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে যারা সাইবার অপরাধ দমনে অভিজ্ঞতা আছে এমন একঝাঁক তরুণ, মেধাবী ও দক্ষ একটি দল নিয়ে নোয়াখালী সাইবার ওয়ারিয়র্স গঠন করেছি আমরা। আমাদের কাজ শুধু মানুষকে কোনো বিনিময় ছাড়া মানবসেবায় সহযোগীতা করা।
তিনি বলেন, আমরা ২০২১ থেকে ২০২৪ সালের নভেম্বর পর্যন্ত “নোয়াখালী সাইবার ওয়ারিয়র্স”এর অফিসিয়াল গ্রুপে এবং পেইজে আসা ১২৭৫ সাইবার অভিযোগের মধ্যে ১১৯৫ অভিযোগ সমাধান করে দিয়েছি। যার মধ্যে অনলাইনের প্রতারক চক্র থেকে ১২ জন নারী উদ্যোক্তার টাকা উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া “নোয়াখালী সাইবার ওয়ারিয়র্স” গত ৩ বছরে ০৮টি হারিয়ে যাওয়া মোবাইল ফোন উদ্ধার, ৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাইবার স্পেসে সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক অধিবেশন, সাইবার স্পেসে নিরাপত্তা ও জনসচেতনতা মূলক লাইভ শো, ১ হাজার শীতার্ত মানুষকে শীতবস্ত্র প্রদান, সিলেটে বন্যায় ৬০০ পরিবারকে ত্রান সহযোগিতা প্রদান, সুনামগঞ্জে বন্যায় ৫০০ পরিবারকে ত্রাণ সহযোগিতা প্রদান, বান্দরবানে বন্যায় ৫০০ পরিবারকে ত্রাণ সহযোগিতা প্রদান, ফেনী- নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় ৪ হাজার ৭০০ পরিবারকে ত্রাণ সহযোগিতা প্রদান, ২০২৩ এবং ২০২৪ সালে মাস ব্যাপি ২ টাকায় ইফতার প্রজেক্টে প্রায় ৯০০০ মানুষকে ইফতার প্রদান, স্বেচ্ছাসেবীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সাইবার প্রশিক্ষণ কর্মশালাসহ বিভিন্ন সামাজিক কর্মসূচি সম্পাদন করেছেন বলেও জানান সংগঠনের এই তরুণ কর্তা।
সরকারি কারিগরি সহযোগিতা পেলে জেলায় সাইবার অপরাধ দমনে আরো কার্যকরি ভূমিকা পালন করা যাবে মন্তব্য করে কারিগরি সহযোগিতা প্রদানের দাবি করেন “নোয়াখালী সাইবার ওয়ারিয়র্স” এর সদস্যরা।
নোয়াখালীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, সাইবার অপরাধ দমনে দীর্ঘদিন থেকে নোয়াখালী সাইবার ওয়ারিয়র্স নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে। তাদের যদি কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হয়, তারা আমাদের কাছ থেকে নিয়ে থাকে। আর তারা তাদের সাধ্যমতো মানুষকে সহযোগিতা করে থাকে। আমরা সবসময় এক সাথে বসি এবং আমাদের তথ্যের আদান-প্রদান করে থাকি এবং কারো কোন সহযোগিতার প্রয়োজন হলে একে-অপরের সহযোগিতা নিয়ে থাকি।