নোয়াখালীর হাতিয়ায় কমিউনিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মামুনুর
রশীদের উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে কলেজ অডিটরিয়ামে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এসময়
কমিউনিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ
মামুনুর রশীদ বলেন, ২০০২ সালে হাতিয়ায় কমিউনিটি কলেজ প্রতিষ্ঠার পর ২০০৩
সালে আমি অত্র কলেজে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে প্রভাষক পদে যোগদান
করি । সময়ের ধারাবাহিকতা ও উত্থান -পতনের মধ্যদিয়ে ২০১৮ সালের জানুয়ারি
মাসে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের এক পরিপত্রের
মাধ্যমে আমি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ'র দায়িত্বপ্রাপ্ত হই।
তিনি
বলেন, কলেজের জন্মলগ্ন থেকে প্রতিষ্ঠাতা ও তার নিকট আত্মীয় কর্তৃক
হেনেস্তার স্বীকার হয়ে অধ্যক্ষ, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষসহ তিনজন শিক্ষক'কে
বিদায় নিতে হয়েছে। কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ইব্রাহিম ছালোয়ারকে অর্থনৈতিক
মিথ্যা অপবাদ দিয়ে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বিতাড়িত করা হয়। দ্বিতীয়
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আ.ন.ম. শাহাব উদ্দিন'কে অনুরূপভাবে বিতাড়িত করে
প্রতিষ্ঠাতার মামাতো ভাই ফাহিম উদ্দিনকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব
প্রদান করা হয় । আইনগত বৈধতার প্রশ্নে ফাহিম উদ্দিন অনুপযুক্ত প্রতীয়মান
হলে এ এইচ এম জিয়াউল ইসলামকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। প্রতিষ্ঠাতার
মানসিক অত্যাচার ও অসহযোগিতার কারণে তিনিও কলেজ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। পরে
কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ আইনগত দিক ও জ্যেষ্ঠতা বিবেচনা করে আমাকে
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করে।
মামুনুর রশীদ বলেন, ২০১০ সাল থেকে কলেজ প্রতিষ্ঠাতা অর্থনৈতিক
অসহযোগিতা’সহ যাবতীয় বিষয়ে কলেজ থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলেন। ফলে এই
সময় থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্রয়াত মাহমুদ রাতুল সাহেব অর্থনৈতিক সহযোগিতা
করেন। অথচ প্রতিষ্ঠাতা কলেজটি এমপিওভুক্ত না করে প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে
পরিণত করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু কলেজটি এমপিওভুক্তির কার্যক্রম এগিয়ে
নিয়ে যাওয়ায় আমার উপর প্রতিষ্ঠাতার বৈরিতা। তাই তিনি ও তার অনুসারীরা
আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ আরোপ করে স্থানীয় পত্রিকায় নিউজ করেন। ২০২৫
সালে ১৪ মার্চ প্রতিষ্ঠাতা ১৫/১৬জন লোক নিয়ে স্থানীয় জাহাজমারা বাজার
থেকে মিছিল নিয়ে কলেজে তালা লাগিয়ে দেয় এবং তার মামাতো ভাই ফাহিম
উদ্দিনকে মৌখিকভাবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের ঘোষণা দেন। এসময় উপস্থিত জনতার
সামনে আমাকে হেনস্থা ও প্রাণনাশ করার হুমকি দেন।
তিনি বলেন,
আমি চলতি মাসের ২১ এপিল জাহাজমারা জামে মসজিদে জোহরের নামাজ আদায়ের
উদ্দেশ্যে এলে অযুখানায় হঠাৎ আমার উপরে হামলা করে হাতে মারাত্মক যখম করেন
কলেজের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী আফসার উদ্দিন’সহ কয়েকজন সন্ত্রাসী। এ
ঘটনায় কলেজের বর্তমান সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করনসহ
ফাহিম উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে সাতজনের বিরুদ্ধে হাতিয়া কোর্টে মামলা
দায়ের করেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।
এছাড়া
প্রতিষ্ঠাতা রাস্তা সংলগ্ন কলেজের সাতটি ভিটি প্রায় ১১লক্ষ টাকা বিক্রি
করে ফেলেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মামুনুর
রশীদ।
সংবাদ সম্মেলনে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্টনিক্স মিডিয়ার সাংবাদিকগন উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে,
কলেজ প্রতিষ্ঠা আমিরুল মোমিন বাবলুর দ্বারা হামলার শিকার কলেজের আরেক
ভুক্তভোগী প্রভাষক আবু নাইম মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, কলেজকে এমপিওভুক্ত করার
নামে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠাতা তার থেকে ২লক্ষ টাকা নেন। এমপিওভুক্ত করতে না
পারায় প্রদেয় টাকা চাওয়ায় ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল দুপুরে উপজেলা কোর্টের
সামনে হুমায়ুন হোটেল সংলগ্ন প্রতিষ্ঠাতার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা তার উপরে
নির্মম হামলা চালায়। একইভাবে আরও পাঁচজন শিক্ষক থেকে দেড়-দুইলক্ষ টাকা
করে নেন প্রতিষ্ঠাতা।
সংবাদ সম্মেলন শেষে উপস্থিত শিক্ষক
শিক্ষার্থীরা উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, কলেজে এমন অনিয়ম ও হামলার ফলে পাঠদান
এবং পরীক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে এবং আমরা ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে
দিয়ে সময় পার করেছি।