ঢাকা সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

Rupalibank

অন্তর্বর্তী সরকারকে রিজভী: নির্বাচনের ডেটলাইন দিতে এতো দ্বিধা-সংকোচ কেন?


মোহাম্মদ সোহেল, স্মার্ট বাংলাদেশ
১৩:১২ - মঙ্গলবার, নভেম্বর ১২, ২০২৪
অন্তর্বর্তী সরকারকে রিজভী: নির্বাচনের ডেটলাইন দিতে এতো দ্বিধা-সংকোচ কেন?

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অন্তর্ববর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, নির্বাচনের ডেটলাইন দিতে আপনাদের মধ্যে এতো দ্বিধা, এতো সংকোচ কেন? তিনি বলেন, ৫ আগস্টের চেতনাকে ধারণ করতে পারছেন না, তাই স্বৈরাচারের আরেক লোককে আপনারা বসিয়ে রেখেছেন। আপনারা বিভিন্ন জায়গায় স্বৈরাচারের দোসরদের বসিয়ে রেখেছেন। তারাতো আপনাকে ব্যর্থ করবেই।  

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকেল ৫টায় নোয়াখালীর চৌমুহনী রেলওয়ে ময়দানে আয়োজিত গণজমায়েতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী এসব কথা বলেন।

বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপি, চৌমুহনী পৌরসভা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে এই কর্মসূচির আয়োজন করেন। সমাবেশের উদ্বোধন করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যাহ বুলু।  

নতুন উপদেষ্টা বানানোর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আপনি আবার নতুন কিছু উপদেষ্টা করেছেন। নতুন উপদেষ্টা করার অধিকার আপনার আছে। কিন্ত গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশীজন যারা তাদেরতো একটা অভিমত নেওয়া দরকার ছিল। যে মেয়েটি বিতর্কিত শেখ মুজিবের বায়োপিক ছবিতে অভিনয় করেছে। আপনারা তার স্বামীকে উপদেষ্টা বানিয়েছেন।

অন্তর্বর্তী সরকারে বিএনপির সমর্থন রয়েছে দাবি করে রিজভী বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে আপনারা সরকার হয়েছেন। আপনাকে বিএনপি সমর্থন করেছে। যারা গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছে তারা সমর্থন দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা সমর্থন দিয়েছে। কিন্ত আমরাতো আপনাদেরকেই সমর্থন করে যাচ্ছি। কিন্তু মাঝে মাঝে কথা বলতে হয় কেন।

তিনি বলেন, আলুর কেজি কেন হবে ৭৫-৮০ টাকা। আলুর দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না কেন। আপনি সিন্ডিকেটবাজদের কেন গ্রেপ্তার করতে পারছেন না। দুর্বলতা কোথায় এটা একটু জানতে চাই। এটাতো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে মানুষের কাম্য নই। কেন এটা বাড়ছে, মানুষতো অনেক ধরনের প্রশ্ন করে।

অন্তর্বর্তী সরকারেক উদ্দেশ্য করে রিজভী আরও বলেন, আপনি নির্বাচনের কথা বলেন, কিন্ত নির্বাচনের কোন ডেটলাইন দেননা, এটা কেন?  এটাতো রহস্যজনক। আপনারা সংস্কার করবেন।  সবাই মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন কি, স্কুলের হেডমাস্টার। আপনারা সংস্কারের একটা পাট দিবেন। সেটা তৈরী করে, সিলেবাস তৈরী করবেন, সিলেবাস তৈরী করে রাজনৈতিক দলগুলোকে আগে শিক্ষা দান করবেন। মনে হচ্ছে এটা তাদের ইচ্ছা। তারা এখন স্কুলের হেডমাস্টার বা শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। আপনারা মনে করছেন বিএনপির লোক যারা গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আছে তারা অশিক্ষিত। আমরা তোমাদেরকে আগে সংস্কার শিখাই, সংস্কার শিখাই, তারপর তোমরা নির্বাচনের কথা বল।  

এক উপদেষ্টার বক্তব্যের জবাবে রিজভী বলেন, তাদের একজন উপদেষ্টা বলছে, খালি নির্বাচন, নির্বাচন করলে হবে।  উপদেষ্টাকে বলি আপনি কি হেডমাস্টার। আপনি আগে শিক্ষা দিবেন তারপর আমরা শিখব, পড়াশুনা করব। আমরা কি জানিনা সংস্কার কি। আপনারা প্রস্তাব দিতে পারেন।  সেই প্রস্তাবটা দেবেন নির্বাচিত সরকারে কাছে। এজন্য নির্বাচন দিন।    

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর সমালোচনা করে রিজভী বলেন, সারাদেশের মানুষ জেগে উঠেছে বলেই হাসিনার মত এত নির্মম, নিষ্ঠুর, এত রক্ত নিংড়ানো একটি স্বৈরাচারকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে মনে করেছে তার বাপের জমিদারি। আর এই জমিদারি রক্ষার্থে সে দেশের জনগণকে জনগণ মনে করতনা। চাকর-বাকর মনে করত। জনগণকে চাকর-বাকর মনে করত বলে যারা প্রতিবাদ করেছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় বক্তব্য রেখেছে, যারা মিছিল করেছে, জনসভা করেছে, স্লোগান দিয়েছে তাদেরকে সে শান্তিতে থাকতে দেয়নি। কাউকে অদৃশ্য করে দিয়েছে চিরদিনের জন্য, কাউকে বিচার বর্হিভূত হত্যার শিকার করিয়েছে। এই দানবকে বাংলােদেশর ছাত্ররা বিতাড়িত করেছে।

শেখ হাসিনা সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি টেনে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা বাপের বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে (ভারত) আপনি কি কি নিয়ে গেছেন। অভিযোগ করে বলেন, ভারতের আদানির সাথে বিদ্যুতের অস্বাভাবিক দামে চুক্তি করেছে শেখ হাসিনা সরকার। যারা বিদ্যুতের সিন্ডিকেট করেছে, বাজারে বিভিন্নভাবে সিন্ডিকেট করেছে। সেই সিন্ডিকেটের টাকা কি আপনি আপনার স্বামীর বাড়িতে নিয়ে গেছেন। এটা জনগণের জিজ্ঞাসা, এটাই জনগণ আজকে জানতে চায়। আমরা বিদ্যুতের টাকা পাচার হওয়ার কথা শুনেছি, মেট্রোরেলের টাকা পাচার হওয়ার কথা শুনেছি। মেগা প্রজেক্টের অর্থ আত্মসাৎ হওয়ার কথা শুনেছি। আপনি দুর্নীতি করে নিজের লোকদের মধ্যে টাকা ভাগ করে টাকাগুলো পাচার করে দিয়েছেন। যার খেসারত জনগণকে দিতে হচ্ছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দিতে হচ্ছে।

বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষ্যা চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে গণজমায়াতে আরও বক্তব্য রাখেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, নোয়াখালী জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এডভোকেট আব্দুর রহিম, এডভোকেট এবিএম জাকারিয়া, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আব্দুর রহমান, জেলা বিএনপির সদস্য শামীমা বরকত লাকী, চৌমুহনী পৌরসভা বিএনপির সভাপতি জহির উদ্দিন হারুন।

গণজমায়াতে আন্দোলন সংগ্রামে নিহত ও আহত নেতাকর্মিদের মাঝে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।