বিদ্রোহীদের তড়িৎগতির আন্দোলনের মুখে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর আগ্রাসন ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিমান হামলা জোরদারের পাশাপাশি ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর ট্যাংক ইতোমধ্যে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। এসব ঘটনাবলি সিরিয়ার অস্থিতিশীল পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।
এমন পরিস্থিতিতে, মঙ্গলবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান সিরিয়াকে ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, সিরিয়াকে আর কখনই ভেঙে ফেলতে দেওয়া হবে না। কেউ যদি সিরীয় ভূখণ্ডের অখণ্ডতা নিয়ে আপস করতে চায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে তুরস্ক।
এরদোয়ান আরো যোগ করেন, এই মুহূর্ত থেকে আমরা সিরিয়াকে আবারও বিভক্ত হতে দিতে পারি না... সিরিয়ার জনগণের স্বাধীনতা, নতুন প্রশাসনের স্থিতিশীলতা এবং সিরীয় ভূমির অখণ্ডতার ওপর যে কোনো ধরনের আক্রমণ হলে আমরা তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবো।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পূর্বে সিরিয়ার আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং গোলান মালভূমিতে জাতিসংঘের নির্ধারিত বাফার জোন এলাকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর প্রবেশের নিন্দা জানায়। তুরস্কের বিবৃতিতে বলা হয়, সিরিয়ার জনগণ বহু বছর ধরে যে শান্তি ও স্থিতিশীলতার আকাঙ্ক্ষা করে আসছে, বর্তমানে তা অর্জনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু মর্মান্তিক বিষয় হলো স্পর্শকাতর এই সময়ে ইসরায়েল আবারো তার দখলদার মানসিকতা প্রদর্শন করছে।
গোলান মালভূমি, সিরিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের একটি পার্বত্য অঞ্চল, ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল দখল করে নেয়। পরে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সিরিয়ার সীমান্তে একটি বাফার জোন নির্ধারণ করা হয়। এই বাফার জোনে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রবেশ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সিরিয়ার ভূখণ্ডের একটি আঞ্চলিক বিতর্কিত এলাকা।
এদিকে, সিরিয়ায় আল-আসাদ সরকারের পতনের পর, গত ৮ ডিসেম্বর, প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ তার পরিবারসহ রাশিয়ায় পালিয়ে যান। এর মাধ্যমে সিরিয়ার ৫০ বছরের বেশি সময়ের শাসন কালের সমাপ্তি ঘটে। আসাদের পতনের পর, সিরিয়ার সীমান্তে ইসরায়েলি বাহিনীর প্রবেশ নতুন এক পর্বের সূচনা করেছে। দীর্ঘ ৫০ বছর পর প্রথমবারের মতো সিরিয়ার বাফার জোন এলাকায় প্রবেশ করেছে ইসরায়েলি সৈন্যরা। ইসরায়েল দাবি করেছে, সীমান্তের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সাময়িক সময়ের জন্য তাদের সৈন্যরা সেখানে প্রবেশ করেছে।
ইসরায়েলের শীর্ষ কূটনীতিক গিডিয়ন সার বলেছেন, নিরাপত্তার স্বার্থে ইসরায়েলি সৈন্যরা ‘সীমিত ও অস্থায়ী পদক্ষেপের’ অংশ হিসেবে বাফার জোনে প্রবেশ করেছে। তবে এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ইসরায়েলি বাহিনীর অতিরিক্ত আগ্রাসী মনোভাব এবং সিরিয়ার অখণ্ডতায় হস্তক্ষেপের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন এবং তুরস্কের কঠোর হুঁশিয়ারি সিরিয়ার ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি আরো জটিল করে তুলতে পারে।