ঢাকা শনিবার, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৫


https://www.ajkerbazzar.com/wp-content/uploads/2025/06/728X90_Option.gif

নতুন করে বাংলাদেশে ঢুকেছে এক লাখ রোহিঙ্গা: ইউনূস


স্মার্ট প্রতিবেদক
১১:২৮ - বুধবার, এপ্রিল ২৩, ২০২৫
নতুন করে বাংলাদেশে ঢুকেছে এক লাখ রোহিঙ্গা: ইউনূস

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে জান্তা সরকার ও আরাকান আর্মির মধ্যে চলমান লড়াইয়ে্র কারণে নতুন করে এক লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। কাতার সফরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে হওয়া একটি রাউন্ড টেবিল বৈঠকে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে এমনটাই বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।

বুধবার হওয়া এই বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কাতারের আমিরের বোন, কাতার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেইখা হিন্দ বিনতে হামাদ আল থানি।

লিখিত বক্তব্যে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের অবস্থা ভয়াবহ। বর্তমান পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে, যেখানে মিয়ানমারের আরাকান আর্মি (এএ) বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ২৭১ কিলোমিটার এলাকাসহ রাখাইন রাজ্যের ১৪টি শহরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে নতুন করে আরও ১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে।"

এমন পরিস্থিতিতে একমাত্র প্রত্যাবাসনকেই রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হিসেবে উল্লেখ করেছেন ইউনূস।

পাশাপাশি সেই বক্তব্যে রোহিঙ্গা সংকটের বর্তমান পরিস্থিতি এবং এর সমাধানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেছেন।

মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, “বাংলাদেশ প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। আর প্রতি বছর নতুন ৩২ হাজার নবজাতক যোগ হচ্ছে। এই বিপুল জনগণের জন্য বাংলাদেশের মানবিক সহায়তা অব্যাহত রাখতে হচ্ছে, তবে আমরা মনে করি একমাত্র টেকসই প্রত্যাবাসনই এই সংকটের সমাধান হতে পারে।”

তার বক্তব্যে ইউনূস রোহিঙ্গা সংকটকে শুধু একটি মানবিক ইস্যু নয়, বরং এটি একটি বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যার সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও পরিবেশগত বড় প্রভাব রয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন যে, রোহিঙ্গা সংকটের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাচ্ছে। ২০২৪ সালের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬৪ দশমিক ৪ শতাংশ অর্থায়ন পেয়েছে, যা সংকট মোকাবিলায় পর্যাপ্ত নয়।

ড. ইউনূস রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তা বাড়াতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান।

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা কাতারের সহায়তার প্রশংসা করে বলেন, “কাতার ২০১৭ সাল থেকে রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি জোরালো সহানুভূতি প্রদর্শন করেছে এবং অনেক মানবিক সহায়তা প্রদান করেছে। বৈশ্বিক ফোরামগুলোতেও রোহিঙ্গা ইস্যু তুলেছে।”

তিনি আরও বলেন, “কাতারের সহযোগিতার ফলে সাড়ে দুই লাখ রোহিঙ্গা উপকার পেয়েছে, বিশেষ করে লিকুইড পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) সিলিন্ডার সরবরাহ, যা (কক্সবাজারে) পরিবেশগত ক্ষতি কমাতে সহায়ক হয়েছে।”

মুহাম্মদ ইউনূস আরও বলেন, “বাংলাদেশ আশা করে যে, কাতার রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়ায় সহায়তা প্রদান করবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে এই সংকট সমাধানের জন্য রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করবে।”

প্রধান উপদেষ্টা আন্তর্জাতিক আদালতে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত গনহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুর গুরুত্বও তুলে ধরেন। “আইসিজে, আইসিসি ও মিয়ানমারের জন্য গঠিত স্বাধীন তদন্ত মেকানিজম (আইআইএমএম) এর মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হওয়া অপরাধের বিচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ” বলেন তিনি।

ইউনুস তার বক্তব্যের শেষে বলেন, “আমরা এই বৈঠক থেকে একটি প্রকৃত অংশীদারিত্বের সূচনা চাই, যা রোহিঙ্গা সংকটকে মানবিক অগ্রাধিকার হিসেবে রাখতে এবং দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে কাজ করতে সহায়ক হবে।”

রোহিঙ্গা ইস্যুকে সামনে রেখে বৈশ্বিক সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য তিনি সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমরা একসঙ্গে মানবতা, স্থিতিশীলতা ও ন্যায়বিচারের জন্য কাজ করতে পারি।”