ঢাকা শুক্রবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৫


https://www.ajkerbazzar.com/wp-content/uploads/2025/06/728X90_Option.gif

“মানুষের হৃদয়ে নীলা” উন্নয়ন ও মানবিকতায় অনন্য এক ইউএনওর বিদায়


মোহাম্মদ সোহেল, স্মার্ট বাংলাদেশ
১৪:২০ - শুক্রবার, আগস্ট ২২, ২০২৫
“মানুষের হৃদয়ে নীলা” উন্নয়ন ও মানবিকতায় অনন্য এক ইউএনওর বিদায়

তিনি শুধু একজন প্রশাসক নন, ছিলেন সাধারণ মানুষের ভরসার জায়গা। নোয়াখালী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আখিনূর জাহান নীলা দীর্ঘ এক বছর ১১ মাস ২৪ দিন দায়িত্ব পালন শেষে গত বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বিদায় নিয়েছেন। এরআগে ২০২৩ সালের ২৮ আগস্ট তিনি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। বিদায়ের মুহূর্তে কেঁদেছেন তিনি, কেঁদেছে উপজেলা জুড়ে শত শত মানুষ, যা এক বিরল দৃশ্যের তৈরী হয়।

নোয়াখালী সদরে যোগদানের পর থেকেই তিনি মাঠপর্যায়ে সরেজমিনে কাজ করার অভ্যাস গড়ে তোলেন। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে শহর, সর্বত্র সরকারি সেবা পৌঁছে দিতে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীর প্রকৃত উপকারভোগী চিহ্নিত করে সঠিক মানুষের হাতে সহায়তা তুলে দেওয়া, ভূমি ও আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত সমস্যায় তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়া এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নে নিবিড় তদারকি ছিল তার প্রশাসনিক কাজের মূলমন্ত্র।

২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময় নোয়াখালী সদরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আখিনূর জাহান নীলা ছিলেন নিরব কিন্তু কার্যকর সমর্থনদাতা। ৫ আগস্টের পর তিনি দক্ষতার সঙ্গে প্রশাসন পরিচালনা করে উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখেন। তার এই দৃঢ় নেতৃত্বের জন্য সাধারণ মানুষ থেকে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ পর্যন্ত সকল মহল তাঁর প্রশংসায় মুখর ছিলেন।

স্থানীয়রা বলছেন, আখিনূর জাহান নীলা ছিলেন সবার কাছে সহজ-প্রবেশযোগ্য একজন কর্মকর্তা। যে কোনো সমস্যায় সরাসরি তাঁর কাছে গিয়ে সমাধান পাওয়া যেত। সদর উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন খোকন বলেন, “নীলা ম্যাডামের মতো মানবিক কর্মকর্তা আমরা আর দেখিনি। তিনি ছিলেন সবার আপনজন। যখনই তাঁর কাছে গিয়েছি, তিনি হাসিমূখে কথা শুনেছেন, দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা করেছেন।”

সদর উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ইউপি সচিব) মো. সহিদুল ইসলাম বলেন, “একজন উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে আখিনূর জাহান নীলা ম্যাডাম ছিলেন নিরঅহংকারী ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে হাসিমূখে কথা বলতেন, তাদের মনের ভাষা বুঝেঁ সমস্যা সমাধান করতেন। কখনো মানুষের প্রতি বিরক্তি ভাব দেখাননি। উপজেলা প্রশাসনের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিজের পরিবারের মতো আগলে রেখেছেন।” তাঁর বিদায়ে আভেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন এই কর্মকর্তা। 

“আখিনূর জাহান নীলার মেয়াদে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে ছিল- স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। হোক তা গ্রামীণ সড়ক সংস্কার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবকাঠামো উন্নয়ন কিংবা অসহায়দের জন্য সরকারি ত্রাণ বিতরণ। প্রতিটি কাজ তিনি করেছেন মাঠপর্যায়ে উপস্থিত থেকে। শুধু একজন প্রশাসক নন, সাধারণ মানুষের কাছে তিনি ছিলেন ভরসার জায়গা।” এমনটিই জানিয়েছেন উপজেলা প্রশাসনের উপ-প্রশাসনিক কর্মকর্তা ফায়মুন হোসেন (ফাহিম)।

বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) বিদায়ের দিনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এসময় কালাদরাপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদাত উল্যাহ সেলিম বলেন, ইউএনও আসবে-যাবে। আখিনূর জাহান নীলা ছিলেন একজন ব্যতিক্রমী ইউএনও। তিনি সকল উন্নয়ন কাজের খোঁজখবর নিজে সরেজমিনে গিয়ে নিতেন। এতে সরকারের বাস্তবায়িত প্রকল্পগুলো টেকসই এবং জনবান্ধব হতো। তাঁর বিদায়ে আমরা সত্যি আবেগ-আপ্লত হয়ে পড়েছি। তিনি আমাদেরকে কাঁদিয়েছেন, নিজেও কেঁদেছেন।

এদিকে, বিদায় বেলায় চোখে পানি নিয়ে আখিনূর জাহান নীলা বলেন, “নোয়াখালী সদর উপজেলার মানুষের ভালোবাসা আমি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত মনে রাখবো। সরকারি কর্মকর্তারা জনগণের সেবক। নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সব সময় চেষ্টা করেছি মানুষের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের। সেই জায়গা থেকে এখানকার সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ আমাকে সহযোগিতা করেছেন।”

বর্তমানে আখিনূর জাহান নীলা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব হিসেবে পদায়ন হয়েছে। তিনি বিদায় নিলেও নোয়াখালী সদরের মানুষ বলছে, “তিনি আমাদের হৃদয়ে থাকবেন মানুষের ইউএনও হিসেবে।”

অপরদিকে, নোয়াখালী সদর উপজেলায় নতুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে যোগদান করেছেন হোমায়রা ইসলাম। তিনি সর্বশেষ সিনিয়র সহকারী কমিশনার হিসেবে বাগেরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কর্মরত ছিলেন।