মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করলেন ব্রিটিশ এমপিরা। তারা রোহিঙ্গাদের জন্য বাংলাদেশে আর্থিক সহায়তা বাড়াতে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার (২ মে) ব্রিটিশ এমপিরা ‘বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সহায়তা’ বিষয়ক বিতর্কে যোগ দেন। এ সময় তারা রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করেন। বিতর্কটি পরিচালনা করেন বেডফোর্ডের এমপি মোহাম্মদ ইয়াসিন। গত জানুয়ারিতে কক্সবাজার সফর করেন তিনি।
লেবার, কনজারভেটিভ ও স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ সরকারের উদারতার প্রশংসা করেন ব্রিটিশ পার্লামেন্টের স্পিকার। সেই সঙ্গে এ সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের পাশে সবার থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেন। ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বক্তব্যের নথি থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বিতর্কে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী। তিনি বলেন, কক্সবাজারের শরণার্থী ক্যাম্পগুলোতে অর্ধেকের বেশি শিশু। তারা প্রতিভা বিকাশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বেডফোর্ড ইস্টের এমপি ইমরান হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সাহায্যের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলো তার অর্ধেকও পাওয়া যায়নি। বিষয়টি হতাশার।
লাফবরোর এমপি জেন হান্ট বলেন, গত মার্চ মাসে আমি বাংলাদেশ সফর করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি সে সময় কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করি। রোহিঙ্গা জনগণের ওপর মিয়ানমারের নিপীড়ন, বৈষম্য ও অত্যাচারের ফলে বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ নারী-পুরুষ ও শিশু সেখানে আশ্রয় নিয়েছে।
পলিন ল্যাথাম বলেন, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কমিটি দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। কক্সবাজার শরণার্থী শিবির আমরা যারা পরিদর্শন করেছি তারা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। সেখানে চরম ক্ষুধা ও সহিংসতা থেকে শরণার্থী নারী ও মেয়ে শিশুদের রক্ষায় যুক্তরাজ্যের সাহায্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল তা আমরা স্বচক্ষে দেখেছি।
টম হান্ট বলেন, আমি তিনবার বাংলাদেশ সফরের সুযোগ পেয়েছি। তিনবারই রোহিঙ্গা শিবিরে গিয়েছি। শিবিরে লোক বেড়েছে। আমি মনে করি সেখানে আমাদের সহায়তা আরো বাড়ানো উচিত।
তিনি আরো বলেন, আমরা জাতিসংঘ এবং জাতিসংঘের প্রস্তাবের মাধ্যমে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছি। তবে হতাশার বিষয় হলো, অনেক দেশ মিয়ানমার সরকারের নিন্দায় বড় ভূমিকা পালন করেনি। মিয়ানমার সরকারের নিন্দায় ভারত ও পাকিস্তান কী ভূমিকা নিচ্ছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আমি মনে করি, (রোহিঙ্গা ও মিয়ানমার ইস্যুতে) আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রতিক্রিয়া হওয়া দরকার।
রোহিঙ্গাদের ভয়াবহ এই পরিস্থিতির শুরু থেকেই যারা প্রচারণা চালাচ্ছেন তাদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ব্রিটিশ এমপি সারাহ চ্যাম্পিয়ন। এছাড়া, বাংলাদেশ স্টাডি সার্কেলের চেয়ারম্যান সৈয়দ মোজাম্মেল আলী বলেন, মোহাম্মদ ইয়াসিনসহ বিতর্কে অংশগ্রহণকারী সব এমপিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
রোহিঙ্গাদের বিশ্বে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শরণার্থী জনগোষ্ঠী উল্লেখ করে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ উদারতা দেখিয়েছে। ব্রিটিশ এমপিরাও সেটি উল্লেখ করলেন। তবে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়ের বিষয়টি দীর্ঘমেয়াদী চলতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিরাপত্তা নিশ্চিত করে সম্মানের সঙ্গে তাদের দেশে ফিরে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করা উচিত।