‘অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কারণে রাজধানীর কেরাণীগঞ্জের আদ-দ্বীন হাসপাতালে ভর্তি করাই আমার মেয়ে তাশনিয়াকে। ওটিতে হেঁটেই গিয়েছিল ও।
কিন্তু দুই ঘণ্টা পর নিথর হয়ে ফিরলো আমার মেয়ে’— কথাগুলো বলছিলেন শিশু তাশনিয়ার বাবা মনিরুজ্জামান। তার অভিযোগ— ভুল চিকিৎসায় আমার মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। কল্যাণপুরে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রসবকালীন অস্ত্রোপচারের পর ২৪ বছর বয়সী পলি সাহার মৃত্যু হয়েছে। স্বজনদের দাবি, চিকিৎসকের অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। এমন খবর এখন খবরের কাগজ কিংবা টিভি চালালেই চোখে পড়ে। এ বিষয় স্বাস্থ্য অধিদফতরকে ভাবিয়ে তুলেছে। একইভাবে সিনিয়র বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও উদ্বীগ্ন।
তারা বলেন, আমরাও আপারেশন করেছি-করছি, কিন্তু এমন ঘটনা তো ঘটেনি। অবশ্যই বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে অপারেশন ও চিকিৎসা সেবায় ত্রুটি আছে। এর কারণ উদঘাটন করতে হবে। নইলে দেশের চিকিৎসা সেবায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, রোগীরা বিদেশমুখী হয়েছে, আরো বেশি হবে।
তাদের ভাষ্য, কতিপয় চিকিৎসক এবং সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ ও অবহেলায় রোগীর মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়।
এদিকে ভুল চিকিৎসায় অহরহ মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত টিম গঠন করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। অজ্ঞানকারী ওষুধের কারণে, নাকি চিকিৎসকদের গাফিলতি, নাকি অন্য কোন কিছু তা অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অনুসন্ধান টিম। তাদের রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে অধিদফতর।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, দেশের বিপুল সংখ্যক রোগীকে সরকারের একার পক্ষে চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব না। এ কারণে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি চিকিৎসা সেবা থাকতে হবে। তবে সেবার মনোবৃত্তি থাকা বাধ্যতামূলক। মানসম্মত হতে হবে। সরকারের নিয়মনীতি মেনে পরিচালনা করতে হবে। সেই ব্যবস্থা না থাকলে অনুমোদন দেওয়া ঠিক হবে না।
তারা আরো বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকগুলো সঠিকভাবে পরিচালনা করছে কিনা, আইসিইউ আছে কিনা, গাইডলাইন অনুসরণ করছে কিনা তা নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। যদি সব ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে তারা অপারেশন করতে পারবে না। এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করা গেলে ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুর হার কমে আসবে।
তারা বলেন, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সিভিল সার্জনদের নিয়মিত বিভাগ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিকে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। এটা হয় না বলেই ব্যাঙের ছাতার মতো যেখানে-সেখানে গজিয়ে উঠেছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। দেশে বর্তমানে বৈধ বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের চেয়ে অবৈধের সংখ্যা অনেক বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ভুল চিকিত্সায় রোগীর মৃত্যু সত্যিই দুঃখজনক ঘটনা। আগে কখনো ভুল চিকিত্সা ও অবহেলার অভিযোগে এত মৃত্যু দেখিনি। এই ধরনের মৃত্যু রোধ করতে যা যা করার প্রয়োজন, তাই করবো। কারণ চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নেবো। কোনো মৃত্যুই আমাদের কাছে কাম্য নয়।