পাকিস্তানের অনুরোধে দেশটি থেকে আমদানি করা সব পণ্য লাল তালিকামুক্ত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। গত ২৯ সেপ্টেম্বর পাকিস্তান থেকে আমদানি করা অধিকাংশ পণ্য ‘লাল তালিকাযুক্ত’ করা হয়েছে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) দ্বিতীয় সচিব মো. আবদুল কাইয়ুম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে পাকিস্তান থেকে আগত সব ধরনের পণ্য অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড পদ্ধতির ‘রেড লেন’ থেকে অবমুক্ত করা হয়েছে। শুধুমাত্র পাকিস্তানের পণ্য এ ‘রেড লেনে’ ছিল। ন্যাশনাল সিলেক্টিভিটি ক্রাইটেরিয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ায় পণ্যগুলোকে ‘রেড লেন’ থেকে অবমুক্ত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, মাদকদ্রব্যসহ নিষিদ্ধ পণ্যে কঠোরতা রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি ও পণ্য খালাসের ক্ষেত্রে সহজ পদ্ধতির পথে হাঁটছে এনবিআর। এতে করে দেশে উৎপাদনমুখী পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে কোনো রকম জটিলতা থাকবে না। পাকিস্তান থেকে আগত সব পণ্যের চালান ন্যাশনাল সিলেকটিভ ক্রাইটেরিয়া কর্তৃক শতভাগ কায়িক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত হচ্ছে। ফলে রেড লেন থেকে অবমুক্তকরণে অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ডেপুটি কমিশনার পর্যায়ের কর্মকর্তাদের অধিক সময় ব্যয় হচ্ছে। তাছাড়া কায়িক পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য কোনো ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না বিধায় ঢাকা কাস্টমস হাউজকে ন্যাশনাল ক্রাইটেরিয়া থেকে বহির্ভূত রাখার জন্য বলা হয়েছে।
আরো বলা হয়, পাকিস্তান থেকে আগত সব ধরনের পণ্যের চালান ন্যাশনাল ক্রাইটেরিয়া বহির্ভূত রাখার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। তাছাড়া লোকাল ক্রাইটেরিয়ার আওতায় সময়ে সময়ে ঝুঁকি বিবেচনায় ওই দেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে পণ্যভিত্তিক রিস্ক ম্যানেজমেন্ট চালু রাখার বিষয়ে কাস্টমস হাউজগুলো প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে দেখা করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ। তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে স্তিমিত হয়ে পড়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরালো করার আহ্বান জানান। ওই সময় সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন কারণে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। পাকিস্তান এখন আবার বাণিজ্য শুরু করতে আগ্রহী।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানিতে দাপ্তরিক যে জটিলতা আছে, তা কেটে গেলে দেশে উৎপাদনমুখী কাঁচামাল আমদানি করা সহজ হবে। দেশে উৎপাদনমুখী পণ্যের কাঁচামাল হিসেবে পাকিস্তানি তুলা, সুতা ও কাপড়ের চাহিদা রয়েছে। দেশটির শিশুখাদ্য, জুস, কাটলারি ও অস্ত্রোপচার সরঞ্জামেরও বড় বাজার রয়েছে বাংলাদেশে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশের চামড়া, টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাতে পাকিস্তানিদের বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ রয়েছে। পাকিস্তান সরকারের তথ্য মতে, ২০২৩ সালেও বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে রপ্তানি হয়েছে ছয় কোটি ৩৩ লাখ ডলারের বেশি পণ্য। পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে আমদানি হয়েছে ৬৫ কোটি ৫ লাখ ডলারের পণ্য।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর থেকে পাকিস্তানের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সীমিত হতে থাকে। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ফের দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের অনুরোধে দেশটি থেকে আনা পণ্যগুলো ‘লাল তালিকামুক্ত’ করার পদক্ষেপ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।