ঢাকা সোমবার, ডিসেম্বর ২৩, ২০২৪

Rupalibank

শিল্প অস্থিতিশীলতার দায় শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না


স্মার্ট প্রতিবেদক
৮:২৪ - শুক্রবার, অক্টোবর ৪, ২০২৪
শিল্প অস্থিতিশীলতার দায় শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না

সাভার-আশুলিয়া ও গাজীপুর-ময়মনসিংহসহ দেশের বিভিন্ন পোশাক শিল্পাঞ্চলে সাম্প্রতিক অস্থিতিশীলতার প্রেক্ষিতে নিছক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এনে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বকেয়া মজুরিসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার আন্দোলনের ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। প্রোডাকশন বোনাস ও হাজিরা বোনাসসহ শ্রমিকদের ঐচ্ছিক কিছু দাবি-দাওয়া সরকার ও মালিক পক্ষ মেনে নেয়ার কথা বলে শ্রমিক আন্দোলন দমন করতে শ্রমিকদের ওপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে।

এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ওএসকে গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোহাম্মদ ইয়াসিন এবং সাধারণ সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, মজুরি বৃদ্ধি ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকারসহ শ্রমিকদের মৌলিক সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে শিল্প অস্থিতিশীলতার দায় শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া যাবে না।

বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার ২০২৩ সালে মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন দমন করতে ৪ জন শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে। শিল্পাঞ্চলে সন্ত্রাস ও ভাড়াটে মাস্তান দিয়ে এক ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে শ্রমিকদের ওপর সাড়ে ১২ হাজার টাকার প্রহসনের মজুরি চাপিয়ে দেয়া হয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে গার্মেন্টস শ্রমিকরা শিল্পাঞ্চলে গণতান্ত্রিক শিল্প পরিবেশ ও বাজারদরের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নূন্যতম মজুরি দাবি করে। কারখানার ভিতরে নিপীড়ন-নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন হলেও বর্তমানে কারখানা ও শিল্পাঞ্চলে আগের মত একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সন্ত্রাস-মাস্তান দিয়ে শ্রমিকদের মারধোর ও নির্যাতন করা হচ্ছে। ফলে কারখানার ভিতরে মালিক-ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে সুষ্ঠু পরিবেশে শ্রমিকদের আলোচনা করার পরিবেশ না থাকায় শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হয়ে রাস্তায় অবস্থান নিচ্ছে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী শ্রমিকদের বিক্ষোভকে কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো তাদের স্বীয় স্বার্থে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।

বলা হয়, এমতাবস্থায় প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী শ্রমিক বিক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র যেন করতে না পারে সেজন্য সরকার-মালিক ও গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠনগুলোকে শ্রমিকদের মৌলিক সমস্যাগুলোর দিকে দৃষ্টি দিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ নিরসন প্রক্রিয়ায় যাওয়া উচিত ছিল। অথচ দেখা যায়, গার্মেন্টস সেক্টরের অস্থিতিশীলতা নিরসনে সরকার-মালিক ও গার্মেন্টস শ্রমিক সংগঠন একত্রিত হয়ে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হলেও শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি ও কারখানার ভিতরে সুষ্ঠু শিল্প পরিবেশ নিশ্চিত করার মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে যাওয়া হয়েছে। মাসের পর মাস শ্রমিকদের মজুরি বকেয়া থাকলেও শ্রমিকরা আন্দোলনে যাওয়ার আগেই মালিককে মজুরি পরিশোধে বাধ্য করা যাচ্ছে না। বরং শিল্প সংকটের দায় শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে শ্রম আইনের ১৩(১) ধারার অপপ্রয়োগ ঘটিয়ে ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ ভিত্তিতে শ্রমিকদের মজুরি হতে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকরা আরো বিক্ষুব্ধ হয়ে রাস্তায় নামলে কাওসার হোসেন নামে এক শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করা হয়। অথচ এই হত্যাকাণ্ডের দায় সরকার বহন করছে না।

নেতৃদ্বয় বলেন, কারখানায় সুষ্ঠুধারায় ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার না দিয়ে মালিকরা শ্রমিকদের নৈরাজ্যিক কর্মকাণ্ডের দিকে ঠেলে দেয়। একই সঙ্গে ব্যক্তিমালিকানাধীন শিল্পে উৎপাদন ও বণ্টন ব্যবস্থার দ্বন্দ্বের কারণে যে শিল্পসংকট তৈরি হচ্ছে, তার দায়ও শ্রমিকদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাচ্ছে। গার্মেন্টস শিল্প মূলত বিদেশি লগ্নিপুঁজির ওপর নির্ভর থাকায় এ শিল্পের নীতি-নির্ধারক ও স্থায়িত্ব শ্রমিকদের ওপর নির্ভর করে না। অথচ শিল্প সংকট, ব্যবস্থায় মন্দা ও শিল্পের টানাপোড়েন- সকল সমস্যার ক্ষেত্রে গার্মেন্টস শ্রমিকদের ওপর দোষ চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। শ্রমিকরা তাদের একান্ত প্রয়োজনীয় মজুরি বৃদ্ধির দাবি করলেও সরকার ও মালিক পক্ষ তাতে শ্রমিকদের ওপর শিল্প ধ্বংসের দায় চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চালায়।    

নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, গার্মেন্টস সেক্টরে পশ্চিমা বিনিয়োগকারী গোষ্ঠীর মদতপুষ্ট বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন ও এনজিও সংস্থা শ্রমিকদের ঐচ্ছিক কিছু দাবি-দাওয়ার কথা বলে মালিকদের শোষণ-নিপীড়নকে আড়াল করে যাচ্ছে। সাম্রাজ্যবাদী দেশ ও তাদের সংস্থাসমূহের এজেন্ডা-কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে শ্রমিক আন্দোলনের বিরুদ্ধে এসব সংগঠন ও তাদের নেতারা ষড়যন্ত্রকারী ভূমিকা রেখে চলেছে। একই সঙ্গে পশ্চিমা বিরোধী শক্তি চীন-রাশিয়াসহ অন্যান্য দেশের লগ্নিপুঁজিও এদেশে ক্রিয়াশীল থাকায় তাদের পৃষ্ঠপোষকতায়ও কিছু শ্রমিক সংগঠন ক্রিয়াশীল রয়েছে। লুম্পেন, প্রতিক্রিয়াশীল, সুবিধাবাদী এবং মালিকদের পকেটস্থ এসব শ্রমিক নামধারী সংগঠনগুলো মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় শিল্পাঞ্চলে বিভিন্নরকম তৎপরতা চালিয়ে আসছে। শ্রমিকদের বিভ্রান্ত করে, শিল্পাঞ্চলে প্রতারণার জাল বিস্তৃত করে মালিকদের স্বার্থরক্ষাকারী এসব গোষ্ঠী বিভিন্নভাবে প্রকৃত শ্রমিক আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।