ধীরে ধীরে বাড়ছে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে (ইউপিএস) যুক্ত হওয়ার সংখ্যা। গত ৮ মাসে এ প্রকল্পে যোগ দিয়েছেন প্রায় ৫৪ হাজার মানুষ। সরকারি হিসাবে জমা হয়েছে ৪৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের (এনপিএ) সদস্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, চারটি স্কিমের মাধ্যমে সরকারি তহবিলে জমা হয়েছে ৪৩ কোটি ৬২ লাখ টাকা। যার মধ্যে ৫৯৮ জন ‘প্রবাস’, ১১ হাজার ১০৫ জন ‘প্রগতি’, ১৬ হাজার ৩৭৬ জন ‘সুরক্ষা’ এবং ২৬ হাজার ৫৮০ জন ‘সমতা’ স্কিমে যুক্ত হয়েছেন।
এসব স্কিমের মধ্যে ‘প্রবাস’ স্কিমে বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানরত বাংলাদেশি নাগরিক নির্ধারিত হারে বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা পরিশোধ করে অংশ নিতে পারবেন।
গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘মানুষ যেভাবে অংশ নিচ্ছে, খুব শিগগিরই এ সংখ্যা লাখে চলে যাবে। মাঝখানে কিছুদিন ধীরগতি থাকলেও এখন মানুষের আগ্রহ ও অংশগ্রহণ বেড়েছে। আশা করি, এ ধারা অব্যাহত থাকবে। ক্যাম্পেইনের জন্য আমরা পেনশন মেলার আয়োজন করছি।’
নিয়ম অনুযায়ী, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় যত টাকা জমা থাকবে, মেয়াদ শেষে তত বেশি পেনশন দেওয়া হবে।
অন্যদিকে নিম্ন আয়ের মানুষদেরও এ উদ্যোগে সুযোগ রয়েছে। যারা মাসিক ৫০০ টাকা জমা দেবেন তাদের জন্য শুরু থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে আরও ৫০০ টাকা ভর্তুকি দেওয়া হবে। সব মিলিয়ে নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে সবার জন্য বাড়তি বহুগুণ মুনাফা রয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ও খাত সংশ্লিষ্টরা বলেন, নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষে আকর্ষণীয় রিটার্নের সুযোগ থাকলেও রিটার্ন ফান্ডের প্রতি আস্থা না থাকায় মানুষ খুব ধীর গতিতে নিবন্ধন করছে।
এ বিষয়ে গোলাম মোস্তফা বলেন, জনগণের আমানত রক্ষায় অত্যন্ত সচেতন এনপিএ। সরকার এ তহবিল থেকে কোনো ঋণ নিতে পারছে না।
তিনি আরো বলেন, আমরা ট্রেজারি বিল এবং বন্ডে বিনিয়োগ করি যাতে বিল এবং বন্ডে বিনিয়োগের আয় নিশ্চিত হয়। যার ফলে এই তহবিল নিয়ে মানুষের মধ্যে কোনো শঙ্কা থাকবে না।
২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট বহুল আলোচিত অভিন্ন পেনশন স্কিমের যুগে প্রবেশ করে বাংলাদেশ। এই ব্যবস্থা ১৮ বছরের বেশি বয়সী দেশের সব জনগোষ্ঠীর জন্য, যারা ৬০ বছর বয়সের পর আজীবন পেনশন সুবিধা উপভোগ করতে শুরু করবে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ আর্থিক সুরক্ষা বিষয়ে দেশের অধিকাংশ জনগণ এখনো সচেতন নয়। এজন্য প্রবাসীদের অংশগ্রহণ আরো সহজ করতে চায় এনপিএ। পাশাপাশি দেশের মানুষের মধ্যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রচারে আকর্ষণীয় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
অর্থনীতিবিদ ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, জনগণের মধ্যে আস্থার অভাব এবং প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসনের অভাব পেনশন স্কিমের এ দুর্বল প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ী।তিনি বলেন, এ পেনশন স্কিমের টাকা কোথায় বিনিয়োগ হবে, এখান থেকে কীভাবে লাভবান হবে বা লোকসান হলে কী হবে, সে বিষয়ে মানুষ এখনো সচেতন নয়।