ভারতে গত কয়েক দিন ধরেই বিজেপির বেশ কয়েকজন নেতা বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। এই বিষয়টি নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘বঙ্গভঙ্গ’র বিষয়টি নিয়ে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ করেছেন তিনি। এমনকি বিষয়টিকে নিয়ে বিধানসভার ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণের কথা জানিয়েছেন তিনি।
দুইদিন আগে দিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠক থেকে ‘বাংলা ভাগ’ বিতর্কে বিজেপির বিরুদ্ধে ক্ষুবদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার (২৯ জুলােই) বিধানসভাতেও বিজেপি নেতাদের বঙ্গভঙ্গ সংক্রান্ত দাবিদাওয়ার প্রতিবাদে সুর চড়ালেন তিনি।
বিধানসভাকে এড়িয়ে রাজ্যভাগের কথা বলা যাবে না হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, আসুক বাংলা ভাগ করতে। দেখিয়ে দেব কি করে রুখতে হয়! বিজেপির বিরুদ্ধে ‘বিভাজনের রাজনীতি’ করার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, পুরো বাংলা তো বটেই, বিজেপি যেখান থেকে সবচেয়ে বেশি আসন জিতেছে, সেই উত্তরবঙ্গও বঞ্চিত হয়েছে কেন্দ্রীয় বাজেটে।
গত এক সপ্তাহে বিজেপির বেশ কয়েকজন নেতা,বিধায়ক ও সাংসদ নানা আঙ্গিকে বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। বিধানসভায় হাজির হয়ে ভোটাভুটিতে অংশ নেয়ার চ্যালেঞ্জও তাদের উদ্দেশে ছুড়ে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা বলেন, যারা বঙ্গভঙ্গের দাবি তুলছেন, তাদের কিছু বলার থাকলে বাংলার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বলুন। ভোটাভুটি হোক। কার পক্ষে ভোট বেশি পড়ে, কার পক্ষে ভোট কম পড়ে- তা গণতান্ত্রিক পথে বিচার হয়ে যাক।
সম্প্রতি বালুরঘাটের সাংসদ বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার উত্তরবঙ্গকে বাংলার মধ্যে রেখেই উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রকল্পগুলির অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে। তাকে সমর্থন জানিয়েছেন দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তাও। এরপর দক্ষিণবঙ্গ ভাগের নতুন দাবি নিয়ে হাজির হন ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। সংসদে তিনি দাবি তোলেন, বিহারের তিনটি জেলার সঙ্গে বাংলার মুর্শিদাবাদ, মালদাকে জুড়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ঘোষণা করতে হবে।
যা থেকেই বঙ্গভঙ্গ সংক্রান্ত বিতর্কের সূত্রপাত। অবশ্য সোমবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সুকান্ত জানিয়েছেন, বাংলা ভাগের কোনো প্রশ্নই নেই!
নিশিকান্ত লোকসভার শূন্য প্রহরে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মূলত জনবিন্যাসের ভারসাম্য এবং দেশের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে বিহারের কিষাণগঞ্জ, আরারিয়া ও কাটিহারের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও মুর্শিদাবাদের মতো সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গড়ে তোলার কথা বলেন। তার অভিযোগ, ধারাবাহিক অনুপ্রবেশের ফলে বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের ওই পাঁচ জেলার জনবিন্যাস পাল্টে গিয়েছে। ওই জেলাগুলিতে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) চালু করার দাবিও তোলেন তিনি। তার দাবিকে সমর্থন করেছেন মুর্শিদাবাদ জেলার দুই বিজেপি বিধায়ক। এক জন মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ, অন্য জন বহরমপুরের বিধায়ক সুব্রত মৈত্র।
শনিবার দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে নীতি আয়োগের বৈঠকে বলার সময় তার মাইক বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল বলে অভিযোগ তুলেছিলেন মমতা। সোমবার কণ্ঠরোধ করে তার অপমান করা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে বিধানসভায় নিন্দাপ্রস্তাব আনে তৃণমূল। এই নিন্দাপ্রস্তাবের প্রতিবাদে অধিবেশন কক্ষ থেকে ওয়াকআউট করে বিজেপি। এর পরেই বিধানসভায় যান পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। এরপরেই বঙ্গভঙ্গের প্রসঙ্গ তোলেন তিনি।