মেঘনা নদীতে যে জাহাজে সাতজন হত্যার শিকার হয়েছেন, সেই জাহাজের মালিক দিপলু রানা বলেছেন, কর্মীদের সঙ্গে গত রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে কথা হয় তাঁর। সকালে কেউ ফোন ধরেননি। এ নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় ছিলেন।
জাহাজটি থেকে আজ সোমবার বেলা তিনটার পরে পাঁচজনের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আর তিনজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন। একজনকে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
জাহাজটির নাম এমভি আল-বাখেরা। এটি চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার ইশানবালা খালের মুখে নোঙর করার কথা ছিল। জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন পেয়ে নৌ পুলিশ ঘটনাস্থলে যায় এবং মরদেহ উদ্ধার করে বলে জানিয়েছেন নৌ পুলিশের চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মুশফিকুর রহমান।
হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্র বলছে, মরদেহ ও আহত ব্যক্তিদের শরীরে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল। কারও কারও ছিল গলা কাটা। পুলিশের ধারণা, গতকাল দিবাগত রাতে দুর্বৃত্তরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। নিহত ও আহত ব্যক্তিরা জাহাজটির কর্মী।
ডাকাতি নাকি শত্রুতার কারণে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে, তা নিয়ে জানতে চাইলে জাহাজটির মালিক দিপলু রানা বলেন, ‘আমি জানি না কীভাবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, কারা ঘটিয়েছে। পুলিশ তদন্ত করে আসল ঘটনা বের করতে পারবে।’
দিপলু রানা আরও বলেন, চট্টগ্রাম থেকে রওনা হওয়ার পর রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে জাহাজটির চালকের (মাস্টার) সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ কথা হয়। তখন চালক জানিয়েছিলেন, মেঘনা নদীতে তাঁরা জাহাজের বহরের মধ্যেই ছিলেন। তবে সকালে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও কেউ সাড়া দেননি। তিনি বলেন, ‘বারবার যোগাযোগ না করে কাউকে না পেয়ে আমাদের আরেকটি জাহাজের (মুগনি-৩) নাবিকদের বিষয়টি জানাই। ওই জাহাজ এমভি আল বাখেরার কাছাকাছি ছিল। তাঁরা আল-বাখেরার কাছাকাছি যাওয়ার পরই হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি জানতে পারেন।’
লাইটার জাহাজ পরিচালনাকারী সংস্থা বাংলাদেশ ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল জানায়, ১৯ ডিসেম্বর আল-বাখেরা নামের জাহাজটি ইউরিয়া সার পরিবহনের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়। জাহাজটির ধারণক্ষমতা ৮০০ মেট্রিক টন। জাহাজটির পণ্য পরিবহন ঠিকাদার মেসার্স হামিদিয়া এন্টারপ্রাইজ। বরাদ্দ পাওয়ার পর জাহাজটিতে ২১ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর কাফকো জেটি থেকে ৭২০ টন ইউরিয়া সার বোঝাই করা হয়। রোববার ভোরে জাহাজটি সার নিয়ে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ীর উদ্দেশে রওনা হয়। এই সার ছিল বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি)।
জাহাজটিতে বহন করা পণ্যের এজেন্ট হামিদিয়া এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক (পরিচালন) পারভেজ হোসাইন বলেন, জাহাজ গন্তব্যে রওনা হওয়ার পর তাঁরা নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন। সকাল থেকে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় মূলত মুগনি-৩ জাহাজের নাবিকেরা এমভি আল-বাখেরার কাছাকাছি গিয়ে ঘটনা জানতে পারে।
জানতে চাইলে মুগনি-৩ জাহাজের চালক মোহাম্মদ বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘আমরা খালি জাহাজ নিয়ে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিলাম। এ সময় মালিকের ফোন পেয়ে বেলা একটার দিকে আমরা এমভি আল-বাখেরা জাহাজের কাছাকাছি যাই। সেখানে গিয়ে এমভি আল-বাখেরা জাহাজে রক্তাক্ত অবস্থায় পাঁচজনকে পড়ে থাকতে দেখেন আমাদের সুকানি রবিউল। তাঁরা জীবিত ছিলেন না।’ তিনি বলেন, ‘পাঁচজনের বাইরে গুরুতর আহত অবস্থায় তিনজন জাহাজে পড়ে ছিলেন। দ্রুত বিষয়টি আমরা পুলিশকে জানাই। তখন পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।’