বৃষ্টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের শিক্ষার্থীদের জন্য অভিশাপ। এর মধ্যে ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে যেন নেমে এলো ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। আর তাতে দুর্ভোগের শেষ নেই শিক্ষার্থীদের।
বৈধ ছাত্র হওয়ার পরও কোনো রুম না পেয়ে হলের ফাটল ধরা বারান্দায় মানবেতর জীবন-যাপন করেন এই হলের অনেক শিক্ষার্থী। সিত্রাংয়ের প্রভাবে তারা সেই বারান্দায়ও অবস্থান করতে পারেননি। বৃষ্টি আর দমকা হাওয়ার ঝাপটায় বইখাতা, বিছানাপত্র সব ভিজে একাকার। বাধ্য হয়ে কেউ কেউ অবস্থান নেন মসজিদে। কেউ আবার অন্য কোনো হলে কিংবা কোনো বন্ধু, বড় ভাইয়ের রুমে।
অন্যদিকে ড্রেন ও বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থা না থাকায় হলের মাঠ-ঘাট যেন পরিণত হয়েছে হাওরে। হলের মাঠ ও চারপাশে সৃষ্টি হয়েছে জলজট। যার ফলে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।
এদিকে, দেয়ালে ফাটল দেখা দেওয়ায় হলের ভেতরের কোনো কোনো অংশেও পানি জমতে দেখা যায়। এছাড়া ঝোড়ো হাওয়ায় কয়েকটি গাছও উপড়ে গেছে।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, ‘এসব সমস্যা সমাধানে হল প্রশাসনের সদিচ্ছা না থাকায় দিনের পর দিন তারা মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তবে হল প্রশাসনের দাবি, আচমকা ঘূর্ণিঝড়ে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।’
এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ও দুঃখ প্রকাশ করতে দেখা যায়। মিজানুর রহমান সাকিল নামে এক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটপাতে যে সকল মানুষ ঘুমায় তারা আর এসএম হলের বারান্দায় থাকা শিক্ষার্থীরা আজ সমান সিচুয়েশনে!’
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘প্রশাসন এখনও আমাদের বৈধ সিট দেয়নি। বারান্দায় আমরা খুবই মানবেতর জীবন-যাপন করি। বিশেষ করে বৃষ্টি আসলে আমরা ঘুমাতেই পারি না। জামা-কাপড়, বই-খাতা ভিজে যায়। গতকাল রাতে আমাদের বেশিরভাগ বন্ধু ঘুমিয়েছে মসজিদে না হয় কারো না কারো রুমে। স্বপ্নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে যেন আরও দুর্ভোগে পড়েছি।’
হাওরের সঙ্গে তুলনা করে হলের আবাসিক শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঘুম থেকে উঠে যেন হাওড় দেখতে পেলাম। শিক্ষার্থীরা থাকতে পারছে না, ভালো খেতে পারছে, জলাবদ্ধতা। এসব দেখার যেন কেউ নেই!’
কিছুটা কটাক্ষ করে ফেসবুকে একজন লিখেছেন, ‘ইতালির ভেনিস শহরের আদলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ভবন তৈরির কথা থাকলেও তার বাস্তবায়ন এতদিনেও হয়নি। আজ শ্রীমতী সিত্রাং এর কল্যাণে সেই নকশা বাস্তবে রূপ নিয়েছে।’
হলের কেয়ারটেকার মোহাম্মদ হালিম বলেন, কয়েকদিন ড্রেন পরিষ্কার না করায় এবং হটাৎ ঘূর্ণিঝড়ে এমন জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আমরা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছি।
প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক অধ্যাপক মজিবুর রহমান বলেন, বারান্দা ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শিক্ষার্থীদের থাকতে নিষেধ করা হয়েছে। এখন সেখানে যারা অবস্থান করছে তারা বেশিরভাগ মেয়াদোত্তীর্ণ ছাত্র। তারপরও আমরা বিষয়টি নজরে নিয়েছি। জলাবদ্ধতার বিষয়টিও দ্রুত সমাধানের জন্য বলা হয়েছে। আমাদের হলটি মারাত্মকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ। হলের সংস্কার কাজ শুরু হবে। বৈধ শিক্ষার্থীদের অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হবে।