ঢাকা শুক্রবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৫


https://www.ajkerbazzar.com/wp-content/uploads/2025/06/728X90_Option.gif

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নোয়াখালী একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল: মো. জহিরুল ইসলাম


স্মার্ট ডেক্স
১৩:০৮ - শুক্রবার, নভেম্বর ২১, ২০২৫
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে নোয়াখালী একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল: মো. জহিরুল ইসলাম

বাংলাদেশের অর্থনীতি আজ একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। বিশ্ব অর্থনীতির তুলনায় আমাদের নীতি-পরিকল্পনা এখনো কাঙ্ক্ষিত শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারেনি। অথচ দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ তরুণ, যাদের মেধা, যোগ্যতা ও উদ্যম কাজে লাগালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি বহুগুণ বাড়তে পারত। কিন্তু পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা, দক্ষতা উন্নয়ন ও উদ্ভাবনী পরিবেশের অভাবে এই তরুণদের বড় অংশ বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে। এর প্রভাবও সুস্পষ্ট- গার্মেন্টস, চামড়া, ঔষধসহ বেশ কিছু সম্ভাবনাময় শিল্পে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বর্তমান বাস্তবতায় রেমিট্যান্সই হয়ে উঠেছে আয়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য খাত।

এই রেমিট্যান্স প্রবাহের একটি বড় অংশ আসে নোয়াখালীসহ দেশের উপকূলীয় ও পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে। নোয়াখালীর মানুষের উদ্যোক্তা মনোভাব, ব্যবসাবান্ধব মানসিকতা ও অধ্যবসায় দেশের বাণিজ্য ও অর্থনীতিতে সুপরিচিত। ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা- যে শহরেই যান না কেন, দেখা যাবে নোয়াখালীর মানুষের উল্লেখযোগ্য অংশ স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। দেশের বাইরে প্রবাসী নোয়াখালীরাও রেমিট্যান্স বৃদ্ধিতে বড় অবদান রেখে চলেছে।

কিন্তু বৃহত্তর নোয়াখালী (নোয়াখালী–ফেনী–লক্ষ্মীপুর) নিজে যে অর্থনৈতিকভাবে উন্নত কোনো কাঠামো পেয়েছে- তা বলা কঠিন। গত ৫৪ বছরে এই সম্ভাবনাময় অঞ্চলে বড় কোনো শিল্প-কারখানা, সিটি কর্পোরেশন, মেট্রো-মানের হাসপাতাল, বিমানবন্দর, আধুনিক সেনানিবাস, পর্যটন কেন্দ্র কিংবা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে ওঠেনি। রাজনৈতিক অবহেলা, আঞ্চলিক পরিকল্পনার অভাব এবং সামাজিক চাহিদার সঠিক মূল্যায়ন না হওয়ার কারণেই নোয়াখালী বহুদিন ধরে পিছিয়ে রয়েছে।

এখন সময় এসেছে ভিন্নভাবে ভাবার। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি মূলত নির্ভর করবে ব্লু ইকোনমি, গভীর সমুদ্র বন্দর, জাহাজ নির্মাণ, মেরিন বায়োটেকনোলজি, উচ্চ-প্রযুক্তি শিল্পাঞ্চল ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর। নোয়াখালীর ভৌগোলিক অবস্থান- সমুদ্রঘেঁষা, উপকূলীয়, নতুন চরসমৃদ্ধ এবং বহুমুখী নদীপথসমৃদ্ধ- এসব সম্ভাবনার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সহজ, পরিবহন খরচ কম, আমদানি-রপ্তানির জন্য খোলা পথ- এসব সুবিধা নোয়াখালীকে শিল্প অঞ্চলে পরিণত করতে পারে দ্রুততম সময়ে।

ভৌগোলিক সুবিধার পাশাপাশি নোয়াখালীর চারপাশে রয়েছে চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, খুলনা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম- এগুলো মিলিয়ে একটি বিশাল অর্থনৈতিক করিডর তৈরি করা যায়। নোয়াখালীকে কেন্দ্র করে একটি দক্ষিণ-পূর্ব মেগাসিটি গড়ে উঠতে পারে, যা ভবিষ্যতে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া বা কাতারের মতো দ্রুত অগ্রসর অর্থনীতির কাঠামো তৈরি করতে সক্ষম হবে। যদি সঠিক নীতি প্রয়োগ করা যায়, তবে এই অঞ্চলের শিল্পায়ন দেশের জিডিপিতে অতিরিক্ত ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি যোগ করতে পারে।

এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রয়োজন শুধু একটি বিকল্প রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিকল্পনা-আর প্রয়োজন তরুণদের ঐক্য, উদ্যম ও দেশপ্রেম। সাম্প্রতিক সময়ের সামাজিক আন্দোলনে তরুণ প্রজন্ম যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তা নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। কথায় আছে, “তরুণ জাগবে তো বাংলাদেশ জাগবে।”

নোয়াখালীর উত্থান তাই শুধু আঞ্চলিক উন্নয়ন নয়, এটি বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে নতুন গতি দেওয়ার বাস্তব সুযোগ।

লেখক: মো. জহিরুল ইসলাম
মুখ্য সমন্বয়ক
নোয়াখালী ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশন।