বাংলাদেশ অর্থনীতিতে সবচেয়ে পরিবর্তনশীল দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। দেশ যত এগিয়ে যাচ্ছে, স্বাস্থ্য খাতও সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য বিষয়ক বেশকিছু বিষয়েও বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানে হিস্টোপ্যাথলজি, সাইটোপ্যাথলজির মতো যে কয়টি বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সেগুলো নিয়েও কাজ চলছে। সারাদেশে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন নতুন বিষয়গুলো ছড়িয়ে দিতে কাজ করা হবে। আমরা দৃঢ় কণ্ঠে বলতে চাই, স্মার্ট বাংলাদেশের প্যাথলজিস্টরা হবে আরো স্মার্ট।
প্যাথলজি চিকিৎসকদের জাতীয় সংগঠন বাংলাদেশ একাডেমি অফ প্যাথলজির উদ্যোগে ১ম আন্তর্জাতিক কনফারেন্স ও ৭ম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. দীন মো. নুরুল হক প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। জ্ঞান বিনিময় এবং রোগ নির্ণয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা পেতে শনিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে দুইদিন ব্যাপী এই সম্মেলনের উদ্বোধন করা হয়।
এই সম্মেলনের আমেরিকা, কানাডা, ভারত, সিঙ্গাপুর থেকে আগত প্যাথলজিস্টসহ প্রায় সাড়ে তিনশত দেশি-বিদেশি প্যাথলজিস্টরা বিভিন্ন সেশনে অংশ নিয়ে অভিজ্ঞতা ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা বিনিময় করবেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ডাক্তার শাহ মনির হোসেন, আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. শাহেদ আলী জিন্নাহসহ দেশী বিদেশি প্যাথলজিস্টরা।
বক্তারা বলেন, সঠিক চিকিৎসা দেয়ার জন্য সঠিক রোগ নির্ণয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন প্যাথলজিস্টরা। পরীক্ষা এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ক্যান্সারসহ নানাবিধ জটিল রোগের চিকিৎসা অনেকাংশেই নির্ভর করে একজন দক্ষ প্যাথলজিস্টের সঠিক রোগ নির্ণয়ের উপর। বাংলাদেশে প্যাথলজিস্টরা নানাবিধ অপ্রতুলতার মাঝেও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু সরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী সংখ্যা বাড়লেও সে হারে বাড়েনি প্যাথলজি শিক্ষকের পদ। হয়নি প্যাথলজি বিভাগের যথাযথ বিকাশ ও উন্নয়ন। বক্তারা আরো বলেন, সঠিক রোগ নির্ণয়ে প্রশিক্ষিত ডাক্তার তৈরিতে মেডিকেল কলেজে প্যাথলজি শিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে সেবা দেয়ার জন্য নেই পর্যাপ্ত প্যাথলজিস্ট ও টেকনোলিজস্ট। বিভিন্ন রোগ নির্ণয়, বিশেষ করে ক্যান্সার রোগ নির্ণয়ে সারা দেশে রয়েছে প্রযুক্তিগত অপ্রতুলতা। ফলে প্রান্তিক পর্যায় থেকে ঢাকা এবং বিদেশমুখী হচ্ছে ক্যান্সার রোগীরা। বাড়ছে চিকিৎসা খরচ ও বিড়ম্বনা।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. গোলাম মোস্তফা সারাদেশ থেকে আগত প্যাথলজিস্টদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ও প্যাথলজি শিক্ষা, সেবা ও প্রশিক্ষণে একাডেমির ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. শাহেদ আলী জিন্নাহ জানান, বর্তমানে পাশের দেশের কর্পোরেট ল্যাবের এক ধরনের কালেকশন সেন্টার চালু হয়েছে বাংলাদেশে। যার মাধ্যমে রোগীদের স্যাম্পল চোরাচালান করে পরীক্ষার জন্য ওই দেশে পাঠাচ্ছল। এসব সেন্টারে পরীক্ষার মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে অবৈধভাবে। আবার প্রাপ্ত রিপোর্টের বিশ্বাসযোগ্যতা ও দায়দায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে রোগী ভাগিয়ে নেয়ায় জড়িত একশ্রেণির সেবাদানকারীরা। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আহ্বান জানান তিনি।
উল্লেখ্য, ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ একাডেমি অফ প্যাথলজি সারা দেশে প্যাথলজি শিক্ষা ও সেবার মানোন্নয়নে এবং প্যাথলজিস্টদের স্বার্থ রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে।