ভারিবর্ষণ ও ফেনী মুহুরী নদীর জোয়ারের পানি ঢুকে নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২০ লক্ষাধিক মানুষ। ঢুবে গেছে অফিস-আদালত, দোকানপাট, বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, গবাদি পশু ও মুরগির খামার, ফসলি জমি ও মাছের প্রজেক্ট। জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও আশ্রয়ণ কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নোয়াখালী জেলার প্রশাসক কার্যালয়ে জেলা দুর্যোগ কমিটির এক জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, টানা বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদীসহ আট উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে গেছে। ফেনী জেলার পানি নোয়াখালী সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা বেশি ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া খালগুলো অবৈধভাবে দখল ও পৌর এলাকায় ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন না করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
দুপুরে সদর উপজেলার নেনায়াখালী ইউনিয়নের চরউরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যাালয়, চর এলাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহউপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নেয়া ভানবাাসি মানুষের মাঝে শুকনো খাবার ও সুপেয় পানির ট্যাবলেট বিতরণ করেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার আখিনূর জাহান নীলা। এসময় বাংলাদেশ ইউনিয়ন পরিষদ সচিব সমিতি নোয়াখালীর সাধারন সম্পাদক মো. সহিদুল ইসলামসহ সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন। একই দিন সকাল থেকে উপজেলার নোয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাওলনা ইয়াছিন আরাফাত, অশ^দিয়া অশ^দিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান গোারাম হোসেন বাবলু, কাালাদরাপ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শাহাদাত উর্যাহ সেলিম, দাদপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান শিপন শুকনো খাবার ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা নিয়ে নিজ নিজ এলাকার ভানবাসি মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন।
জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক আরজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর ৬ থেকে ৬টা পর্যন্ত নোয়াখালীতে ১৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সক্রিয় লঘুচাপ ও মৌসুমি জলবায়ুর কারণে জেলায় আরও তিনদিন ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. জাকির হোসেন বলেন, জেলায় ৭ লাখ ৭৫ হাজার গ্রাহকের মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে। ভারী বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বেগমগঞ্জের একটি উপকেন্দ্রে পানি উঠে গেছে।
জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, নোয়াখালীর নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটি উপজেলায় বন্যা হয়েছে। এসব উপজেলায় ইতিমধ্যে ৩৮৮ আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক বন্যা আক্রান্ত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। জেলায় প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। দুর্গত মানুষের জন্য ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ চাওওয়া হয়েছে। উপজেলা কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মীরা মাঠে কাজ করছে। ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকারের পাশাপাশি বিত্তশালী মানুষের প্রতি আহবান জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, নোয়াখালীতে প্রথমে জলাবদ্ধতাই ছিলো। কিন্তু ফেনী জেলার মুহুরী নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় সেটা নোয়াখালীর উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সে কারণে নোয়াখালীতে বন্যা দেখা দিয়েছে।