বন্যার পানি নেমে গেলেও নোয়াখালীর সদর, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও সেনবাগ
উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ খাল, জলাশয় দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, ড্রেনগুলো
ভরাট হয়ে যাওয়ার কারণে এসব উপজেলায় জলাবদ্ধতায় এখনো লাখ লাখ মানুষ
পানিবন্দি রয়েছে। এদিকে সোমবার দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত
জেলায় টানা বৃষ্টি হওয়ায় পানি বেড়েছে ১০ থেকে ১২ মি.মি। এই জলজট কমাতে
জেলার সদর, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও সেনবাগসহ বন্যাকবলিত এলাকায় পুরোদমে চলছে
খাল পরিস্কার কার্যক্রম।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলার ৮টি উপজেলা, ৭টি পৌরসভা ও ৮৭টি ইউনিয়নে এখনো
১৩ লাখ ৪৫ হাজার ৩০০ মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। এরমধ্যে সবচে বেশি পানিবন্দি
এলাকা হলো সদর, বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও সেনবাগ উপজেলা। এসব এলাকায় এখনো
৫৫৩টি আশ্রয় কেন্দ্রে ৬৪ হাজার ২৭০জন মানুষ আশ্রিত রয়েছে।
জেলা
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছেন, সোমবার দিবাগত রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত
টানা বৃষ্টি হওয়ায় জেলা সদরে পানি বেড়েছে ৬ মি.মি। উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো
হাওয়া বয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় পূর্ব ঘোষিত ৩নং সতর্ক সংকেত উঠিয়ে
নেওয়া হয়েছে।
এদিকে, বন্যার পানি নেমে গেলেও জেলা সদরের বিভিন্ন
এলাকায় এখনো জলাবদ্ধতা রয়ে গেছে। ফলে ভোগান্তিতে রয়েছে মানুষ। মানুষের
দুর্ভোগ কমাতে জরুরি ভিত্তিতে খাল পরিস্কার ও বাঁধ অপসারণ কার্যক্রম শুরু
করেছে উপজেলা প্রসাশন। সোমবার ও মঙ্গলবার উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক
সহযোগিতা ও দিক নির্দেশনায় প্রেরণা ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্যোগে
উপজেলার খলিফারহাট বাজার এলাকার ময়লা, আবর্জনা ও জঞ্জালে ভরা খালটি
পরিস্কার করা হয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আখিনূর জাহান নীলা
বলেন, দ্রুত জলাবদ্ধতা নিরসনে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরআগে নোয়াখালী
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায়
সোনাপুর-নোবিপ্রবি সড়ক সংলগ্ন খালের বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে। জনদুর্ভোগ
কমাতে উপজেলা প্রশাসনের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
এছাড়াও,
জেলার বেগমগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও সেনবাগ উপজেলা প্রশাসন এবং বিভিন্ন
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে জলবদ্ধতা নিরসনে খাল পরিস্কার কার্যক্রম
অব্যাহত রয়েছে।
অপরদিকে, বন্যায় জেলায় বেড়েছে ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত
রোগের প্রকোপ। ২৫০ শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে রোগীর চাপ সামাল দিতে
হিমশিম খাচ্ছে ডাক্তার, নার্সসহ সংশ্লিষ্টরা। এই অতিরিক্ত রোগীর চাপ সামাল
দিতে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক এর দুটি মেডিকেল টিম সেখানে কাজ করছে।
২৫০
শয্যা নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) সৈয়দ
মহি উদ্দিন আবদুল আজিম জানান, পানিবাহিত রোগীর চাপ বেড়েছে। ডায়রিয়া রোগীদের
জন্য খোলা হয়েছে অতিরিক্ত ওয়ার্ড। গত ২২ আগস্ট থেকে মঙ্গলবার দুপুর
পর্যন্ত ১৬৪৮জন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এরমধ্যে গত ২৪ ঘন্টায়
ভর্তি হয়েছে ৯৪জন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধের সংখ্যা বেশি। এ
পর্যন্ত ৪জন ডায়রিয়া রোগী মারা গেছে।