যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি কোয়াড সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানের নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, চীন আগ্রাসী মনোভাব দেখিয়ে আমাদের পরীক্ষা করছে। বাইডেনের করা এই মন্তব্যটি অসাবধানতাবশত একটি মাইক্রোফোনে রেকর্ড হয়ে যায়। পরে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই সম্মেলনে তা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। বাইডেনের বক্তব্যটি বিশেষভাবে দক্ষিণ চীন সাগরসহ বিভিন্ন অঞ্চলে চীনের আগ্রাসী অবস্থানকে স্পষ্ট করেছে।
বাইডেন তার নিজ শহর ডেলাওয়্যারের উইলমিংটনে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা এবং অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সম্মেলনে কৌশলগত বিষয়ে আলোচনার সময় বাইডেন বলেন, ‘চীন আমাদের পরীক্ষা করছে, এবং এটি শুধু দক্ষিণ চীন সাগরেই নয়, পূর্ব চীন সাগর, দক্ষিণ এশিয়া এবং তাইওয়ান প্রণালীতেও অব্যাহত আছে।’ খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের দিকে ইঙ্গিত করে বাইডেন বলেন, ‘শি এখন অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো নিয়ে বেশি মনোযোগী, তবে একইসঙ্গে তিনি চীনের স্বার্থে কূটনৈতিকভাবে নিজেকে আরো বেশি আক্রমণাত্মক করে তোলার চেষ্টা করছেন।’ তবে বাইডেন জোর দিয়ে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক তীব্র প্রচেষ্টা (যার মধ্যে শির সঙ্গে একটি টেলিফোন আলাপও অন্তর্ভুক্ত) উত্তেজনা কমাতে কাজ করছে এবং সংঘাত প্রতিরোধে সহায়ক হয়েছে।
বাইডেনের এই মন্তব্যগুলো কৌশলগতভাবে কিছুটা বিপদ ডেকে আনতে পারে, কারণ সম্মেলন শেষে কোয়াড নেতারা যে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে, তাতে সরাসরি চীনের নাম উল্লেখ না করে কৌশলগত সমস্যা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতিতে দক্ষিণ চীন সাগরে উত্তেজনার বিষয়টি নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করা হলেও, চীনের নাম সরাসরি উল্লেখ করা হয়নি। তারা শুধু বলেছে, ‘আগ্রাসী ও ভীতিপ্রদর্শনমূলক কার্যকলাপের’ বিরোধিতা করা হচ্ছে।
বাইডেন তার প্রকাশ্য বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, কোয়াড জোট বর্তমান বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও ‘পৃথিবীর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কোয়াড টিকে থাকবে।’ এই মন্তব্যের পর সাংবাদিকরা তাকে জিজ্ঞাসা করেন, আসন্ন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরে কোয়াড টিকে থাকবে কিনা। জবাবে বাইডেন দৃঢ়ভাবে বলেন, ‘নভেম্বরের অনেক পরেও কোয়াড টিকে থাকবে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একই রকমভাবে দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের বার্তা হলো, কোয়াড এখানে টিকে থাকবে।’ উল্লেখ্য, আগামী বছর কোয়াড সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে ভারত।
ইতোমধ্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন আসন্ন জুলাইয়ে বয়সজনিত কারণে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে তার এই বিদায়ী সম্মেলনটি ছিল ব্যক্তিগত আবেগপূর্ণ মুহূর্তে পরিপূর্ণ। সম্মেলনটি বাইডেনের সাবেক স্কুলে অনুষ্ঠিত হয় এবং তিনি নিজের বাসভবনে কোয়াড নেতাদের সঙ্গে একান্তে কথা বলার আয়োজন করেন।
বাইডেন তার ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী আলবানিজ ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী কিশিদার সঙ্গে আনন্দঘন মুহূর্তের কিছু ছবি শেয়ার করেন। ছবিগুলোতে তাদের একটি কাঠের প্যানেলযুক্ত ঘরে বসে আলোচনা করতে এবং বারান্দা থেকে লেকের দৃশ্য উপভোগ করতে দেখা যায়।
এই সম্মেলনের মাধ্যমে বাইডেন প্রমাণ করতে চেয়েছেন, আন্তর্জাতিক জোটগুলোকে তিনি কতটা অগ্রাধিকার দেন এবং এগুলো বিশ্ব রাজনীতিতে কিভাবে স্থায়ী প্রভাব ফেলবে।