দীর্ঘ ৮ বছর ধরে সংস্কার না করায় খানাখন্দে বেহাল দশায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে নোয়াখালী জেলা শহরের হাসপাতাল সড়ক। সড়কটিতে এম্বুলেন্সসহ সব ধরনের যানবাহন চলে হেলেদুলে। এতে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল সহ বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা জেলার ৯ উপজেলার লাখ লাখ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।
২৫০ শয্যা বিশিষ্ট নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের সামনে ৭০০ মিটার সড়কের প্রায় পুরোটাই খানাখন্দে ভরা।
নোয়াখালী পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নোয়াখালী পুরান বাসস্ট্যান্ডের সোনালী ব্যাংকের পাশ থেকে জেনারেল হাসপাতালের দূরত্ব ৭০০ মিটার। এই সড়কে হাসপাতাল ছাড়াও নোয়াখালী আঞ্চলিক ডাকঘর, এনএসআই এর কার্যালয়, ঔষুধ প্রশাসন, নার্সিং ইনস্টিটিউট ও নার্সিং কলেজ ছাড়াও প্রায় অর্ধশত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক রয়েছে। রয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এন-রাশ প্রধান কার্যালয়। এ সড়ক দিয়ে নোয়াখালী পৌরবাসী ছাড়াও জেলার নয় উপজেলা, লক্ষ্মীপুর জেলার পাঁচ উপজেলা এবং ফেনীর দাগনভূঁইয়া উপজেলার লাখ লাখ মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন।
প্রতিদিন প্রায় সহস্রাধিক অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, পিকআপ ভ্যান, ট্রাক, অটোরিকশা, ইজিবাইক, মোটরসাইকেল, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে থাকে এ সড়ক দিয়ে। কিন্তু, জনবহুল ও জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে গিয়ে সড়কে গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিতে সড়কের ওপর পানি জমে গেছে। খানাখন্দগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় রাস্তার সমতলের সঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। বুঝতে না পেরে ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিকশা, ট্রাক, পিকআপ ভ্যান প্রায়ই গর্তে পড়ে গিয়ে বিকল হচ্ছে। অনেকে পড়ে গিয়ে আহত হচ্ছেন।
হাসপাতাল সড়কের মো. আরিফ জানান, প্রায় আট বছর ধরে সড়কটির সংস্কার কাজ হয়নি। সড়কটির পুরো অংশেই কোনো পিচ নেই, আর তৈরি হয়েছে বড় গর্ত। সড়কটি এতই খারাপ যে, যানবাহনতো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলাই মুশকিল।
মাইজদী হাউজিং এলাকার বাসিন্দা আকরাম হোসেন হৃদয় ও আকলিমা মুন্নি বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই হাসপাতাল সড়কে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। গর্তের পানি জমে পুকুর হয়ে যায়। সড়ক দিয়ে শত শত রোগী ছাড়াও হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ ডা. সালাহ উদ্দিন আনাস গণমাধ্যমকে বলেন, জেনারেল হাসপাতাল সড়কটি এতই ঝুঁকিপূর্ণ যে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে চলাই কষ্ট। কচ্ছপগতিতে চলতে হয়, গর্তে পড়ে যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়। এ সড়ক দিয়ে রোগী হাসপাতালে আনার পথে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ে।
শহরের একাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক জানান, ভাঙা রাস্তার কারণে রোগী ও যাত্রী নিয়ে আসা-যাওয়া করতে গিয়ে তাদের গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। এতে গাড়ির আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়। যার কারণে হাসপাতালে রোগী বা যাত্রী আনা-নেয়া করতে মন চায় না।
এছাড়া, নোয়াখালী পুলিশ লাইনস, জেলা কারাগার, জেলা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, জেলা সমাজসেবা কার্যালয়, সোনাপুর কলেজেলর পিছনের লিংক সড়কেরও বেহাল দশা। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কগুলোর ওপর দিয়ে যান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
নোয়াখালী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সুজিত বড়ুয়া এসব সড়কের বেহাল দশার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, হাসপাতাল রোড, জেলখানা রোড ও পুলিশ লাইনস রোডের দুরবস্থার কথা জানি। খুব শিগগির সড়ক তিনটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া বাড়ি ভাঙা-চুড়া সড়কগুলো পর্যায়ক্রমে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।