প্রায় মানুষের মুখেই শোনা যায়, পা ব্যথা। আর এ পা ব্যথা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অধিক উচ্চারিত একটি সমস্যার নাম।
বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, বর্তমানে মানুষের ঘরে বসে কাজের সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে করোনার সময় হোম অফিসের অভ্যাস গড়ে উঠায় অধিকাংশ সময় সবাই বাড়িতে থাকলেও এই সময়টুকু কেউ জুতা ব্যবহার করার প্রয়োজন বোধ করেন না। যার মারাত্মক প্রভাব পড়ছে পায়ে। ব্যথা, স্ট্রেন এবং এমনকি স্ট্রেস ফ্র্যাকচারের মত সমস্যা নিয়ে রোগীরা ভিড় করছেন ডাক্তারদের কাছে।
সম্প্রতি টাইম ম্যাগাজিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই সব সমস্যার যে সমাধানের কথা বলা হয়েছে তাহল- বাসায় জুতা ব্যবহার করা।
আপনি বাইরে বের হওয়ার সময় যেমন জুতা পরেন তেমনি বাসায়ও ব্যবহার করতে হবে জুতা। মিড-আটলান্টিকের পা ও গোড়ালি বিশেষজ্ঞ প্রিয়া পার্থসারথি জানান, তার কাছে আসা রোগীদের তিনি ৩টি প্রশ্ন করেন- আপনি কী কাজ করেন? কোথায় কাজ করেন? আপনি যখন কাজ করেন তখন আপনি পায়ে কী পরে থাকেন?
যারা বাড়িতে হোম অফিস করেন তাদের অধিকাংশই বাসায় সারাদিন জুতা ছাড়াই থাকেন বলে জানান প্রিয়া।
শক্ত মেঝে পায়ের ক্ষতি করে
বাসায় জুতা না পরা আমাদের ছোটবেলার অভ্যাস থেকে এসেছে। বাড়িতে বসে অফিস করছেন, সেই সঙ্গে একটু পর পর রান্নাঘরে যাচ্ছেন, বাথরুমে যাচ্ছেন, সিঁড়ি বেয়ে উঠছেন কিন্তু পায়ে নেই জুতা। বাসায় থাকলেও খালি পায়ে এমন কত চলাফেরা হয় তার পরিমাণ সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা থাকে না।
নিউ ইয়র্ক সিটির পা ও গোড়ালি বিশেষজ্ঞ জ্যাকি সুতেরা বলেন, ‘শক্ত মেঝে, বিশেষ করে যেখানে কার্পেট জাতীয় কিছু বিছানো থাকে না সেগুলোতে সপ্তাহখানেক হাঁটলেই পায়ের গোড়ালির নিচে ব্যথা শুরু হয়’।
ডা. প্রিয়া পার্থসারথি জানান, প্রাথমিকভাবে রোগীরা তার কাছে পায়ের গোড়ালি ব্যথা নিয়ে আসেন। তবে বেশির ভাগ রোগীই আসেন হাঁটু, নিতম্ব এবং পিঠে মারাত্মক ব্যথাসহ। সেই সঙ্গে গোড়ালি শক্ত হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া এবং ছুরিকাঘাতের মত ব্যথা অনুভবও লক্ষ্য করা যায়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের মনে রাখা প্রয়োজন আমরা কোনো নরম ঘাসযুক্ত মাঠ বা সৈকতে হাঁটছি না; বরং এটি প্রকৌশলীর তৈরি করা শক্ত একটি মেঝে’।
আঘাতের ঝুঁকি, দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে অথবা বসে কাজ করা
মেঝেতে বাচ্চাদের খেলনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে, দৌড়ে চলাচল করতে গিয়ে তার উপর পা পড়ল। অথবা দ্রুত রুম থেকে বের হতে গিয়ে ফার্নিচারের কোনায় বেধে গেলো পায়ের আঙুল, আশা করা যায় আপনার তীব্র চিৎকার প্রতিবেশীরা শুনতে পাবেন। প্রিয়া পার্থসারথির মতে, করোনা মহামারির সময়জুড়ে তার কাছে এমন অনেকে এসেছেন যারা খেলনা, ফার্নিচার অথবা পোষা প্রাণীর দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। এই ধরনের আঘাতগুলি বিশেষত ডায়াবেটিস আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে।
এরপরই আসে দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে কাজ করার বিষয়। অনেকের কর্মস্থলে দিনের বেশিরভাগ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ড. প্রিয়া পার্থসারথি বলেছেন, কর্মস্থলে জুতা ছাড়া দাঁড়িয়ে কাজ করার ফলে দ্রুত পায়ে ক্লান্তি চলে আসা এবং প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিসের মতো অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও জুতার পাশাপাশি একটি অ্যান্টি-ফ্যাটিগ ফ্লোর ম্যাট ব্যবহার করা যেতে পারে। এটি পায়ের ক্লান্তি উপশম করে এবং চাপ সমানভাবে বিতরণ করতে পারে।
অবশ্যই, সবাইকে সারাদিন দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না। যারা দীর্ঘসময় বসে কাজ করেন এবং পা ঝুলিয়ে রাখেন তাদেরও জুতা পরিধানের পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। দীর্ঘসময় বসে থাকার ফলে অনেকে এক পা টান দিয়ে নিজের নিচে নিয়ে বসেন। পার্থসারথি বলেন, ‘গোড়ালির চারপাশে এমন টেন্ডন রয়েছে যা প্রসারিত হতে পছন্দ করে না। কয়েক ঘণ্টা শরীরের নিচে এক পা দিয়ে বসে থাকার ফলে টেন্ডোনাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে’।
বাসায় পরা জুতা কেনার ক্ষেত্রে লক্ষণীয়
প্রথমত আপনার বাসায় পরা জুতাটি পরীক্ষা করে দেখুন। যদি এটির তলা সমান না হয়ে থাকে তবে আজই তা ফেলে দিন, এমনটাই বলছেন হেনরি ফোর্ড হেলথের সিনিয়র স্টাফ পডিয়াট্রিক সার্জন ড. নিকোল ব্রুয়েট। তিনি জানান, একটি আদর্শ জুতায় পায়ের আঙ্গুলগুলি মাপ মত বসবে, পায়ের মাঝের ফাঁকা অংশের জন্য কিছুটা উঁচু সাপোর্ট থাকবে। আবার যাদের প্রাকৃতিকভাবে পা সমতল তাদের জন্য সমতল তলা হবে।
ব্রুয়েট বলেন, ‘অনেকে চপ্পল পরতে পছন্দ করেন। তবে এটি ব্যবহারেও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। অল্প সময়ের জন্য চপ্পল ব্যবহার করলেও বাসায় হাঁটাহাঁটি শুরু করার আগেই জুতাটি পরে ফেলুন’।
জীবাণু থেকে কীভাবে রক্ষা পাবেন?
বাইরের জীবাণু ঘরে না ঢুকাতে চাইলে ২টি পৃথক জুতা রাখুন। বাইরে যাওয়ার সময় একটি জুতা পরে বের হবেন, বাসায় ঢুকে আবার বাসার জন্য রাখা জুতাটা পরে ফেলবেন, বলেন ব্রুয়েট।
তার মতে, মানুষ অভ্যাসের দাস। বাইরে থেকে ঘরে ঢুকে বাসার জুতা পরতে মাত্র তিন সেকেন্ড সময় লাগবে। এতটুকু সতর্কতার ফলে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ অনেক সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পারি।
সূত্র: টাইম ডটকম